আগুনে লাকির মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যা, দাবি পরিবারের

সংবাদ সম্মেলনে লাকির বোন প্রিয়াঙ্কা লিখিত বক্তব্যে বলেন, লাকির বেতনের পুরো টাকা স্বামীর পরিবারকে দেওয়া নিয়ে মনোমালিন্য ছিল। এই দ্বন্দ্বে লাকিকে পরিকল্পিতভাবে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়।

অগ্নিদগ্ধ হয়ে সিলেটে পাউবোর কর্মচারী লাকি রানী পালের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা পাল লিখিত বক্তব্য দেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে
প্রথম আলো

অগ্নিদগ্ধ হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের কম্পিউটার ডেটা অপারেটর লাকি রানী পালের (৩০) মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘লাকির মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনায় নয়, পরিকল্পিত একটি হত্যা। এই হত্যায় জড়িত লাকির স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করার পর ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে নানা রকম অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন লাকি হত্যায় জড়িতরা।’

বৃহস্পতিবার সিলেটের দুটি প্রেসক্লাবে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন লাকির বোন ও হত্যা মামলার বাদী প্রিয়াঙ্কা রানী পাল। এর আগে গত রোববার লাকির শ্বশুরবাড়ির লোকজন সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। ওই সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন লাকির পরিবারের সদস্যরা।


সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সেনগ্রামে স্বামীর বাড়ি থেকে গত ৯ আগস্ট রাতে লাকিকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন লাকি মারা যান। এ ঘটনায় ১৭ আগস্ট লাকির ছোট বোন প্রিয়াঙ্কা পাল বাদী হয়ে সিলেটের মোগলাবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় লাকির স্বামী হিমাদ্রি পাল, দেবর হিমেল পাল, শ্বশুর হলধর চন্দ্র পাল ও শাশুড়ি শিখা রানী পালকে আসামি করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, লাকিকে তাঁর স্বামী হিমাদ্রি পাল বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে দেওয়ার কথা বলেন। এই টাকা এনে দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ৯ আগস্ট রাতে রান্নাঘরে নিয়ে লাকির শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। পরে ঘটনাটিকে রান্না করতে গিয়ে কুপির আগুনে দগ্ধ বলে প্রচার করা হয়। ঘটনার প্রায় চার সপ্তাহ পর গত রোববার লাকির শ্বশুরবাড়ির লোকজন সংবাদ সম্মেলন করে লাকির মৃত্যু নিছক একটি দুর্ঘটনা বলে দাবি করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, অপমৃত্যুর ঘটনাকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করতে নানা রকম অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে লাকির পরিবার। পুলিশ কোনো তদন্ত ছাড়াই অপমৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা নিয়েছে। তবে ওই সংবাদ সম্মেলনের পর মোগলাবাজার থানায় যোগাযোগ করলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছাহাবুল ইসলাম তদন্ত ছাড়া মামলা নেওয়ার অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন
স্বামীর সঙ্গে লাকি রানী পাল
ছবি: সংগৃহীত

ওই সংবাদ সম্মেলনের তিন দিন পর বৃহস্পতিবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে লাকির বোন প্রিয়াঙ্কা লিখিত বক্তব্যে বলেন, লাকির বেতনের পুরো টাকা স্বামীর পরিবারকে দেওয়া নিয়ে মনোমালিন্য ছিল। এই দ্বন্দ্বে লাকিকে পরিকল্পিতভাবে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় লাকি তাঁর শরীরে স্বামী, দেবর ও শ্বশুর-শাশুড়ি পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়ে গেছেন। এই ভাষ্য শুনেই হত্যা মামলা করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে মামলাটি নথিভুক্ত করেছে। এ অবস্থায় ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতেই চার সপ্তাহ পর সংবাদ সম্মেলন করেছেন লাকির শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সংবাদ সম্মেলনে লাকির মা, বাবা ও আরও দুই বোন উপস্থিত ছিলেন।