ভৈরবে পুলিশের ‘করোনা হটাও প্রীতি ফুটবল’

ভৈরবে পুলিশের কাজে আত্নবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে ‘করোনা হটাও প্রীতি ফুটবল ম্যাচ’। খেলা শুরুর আগে দুই দলের খেলোয়াড়েরা। আজ বৃহস্পতিবার ভৈরব থানা মাঠে।
প্রথম আলো

করোনার জন্য শুরু থেকেই কিশোরগঞ্জ হটস্পট ঘোষিত জেলা। জেলাটির ১৩ উপজেলার মধ্যে নমুনা সংগ্রহ, আক্রান্ত ও মৃত্যু—এ তিন সূচকেই ভৈরব এগিয়ে। সচেতনতামূলক কাজে অংশ নেওয়া আর বাড়ি লকডাউন করতে করতে অনেকটা ক্লান্ত পুলিশ বাহিনীর কর্মরত সদস্যরা। টানা পাঁচ মাস ধরে মাঠে সক্রিয় থাকার পর ভৈরবে বর্তমানে করোনা নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। বরং দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মাত্রা।

করোনা মোকাবিলায় নতুন করে বেশি মাত্রায় মাঠে সক্রিয় থাকার প্রস্তুতি হিসেবে নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ভৈরব থানা ও নৌ থানা–পুলিশের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়। খেলাটির নাম দেওয়া হয় ‘করোনা হটাও প্রীতি ফুটবল ম্যাচ’।

ছোটবেলা ফুটবল খেলেছি। পুলিশে এসে খেলার সময় কোথায়? তবে আজ গোল দিতে পেরে মনে হয়েছে, করোনাকে জয় করে ফেলেছি।
রাসেল মিয়া, উপপরিদর্শক ও আজকের ম্যাচের প্রথম গোলদাতা

ঠিক বিকেল ৫টা ৭ মিনিটে খেলা শুরু হয়। ভেন্যু ছিল ভৈরব থানা মাঠ। প্রতি দলে খেলোয়াড় ছিলেন সাতজন। ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন ও নৌ থানার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম নিজ নিজ দলের নেতৃত্ব দেন। ভৈরব থানা-পুলিশ খেলতে নামে লাল জার্সি পরে, আর নৌ-পুলিশ নামে হলুদ জার্সি পরে। রেফারির দায়িত্বে ছিলেন ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শ্যামল কুমার নাথ। তাঁর দুই সহযোগী ছিলেন একই থানার কনস্টেবল মো. সামিউল ও মিজানুর রহমান।

খেলা হয় এক ঘণ্টার। প্রথম ভাগের ২৫ মিনিটের সময় নৌ-পুলিশ দল প্রতিপক্ষের জালে প্রথম গোল দেয়। গোলটি করেন নৌ থানার এসআই রাসেল মিয়া। প্রথম ভাগের খেলা শেষ হয় ১-০ গোলে। দ্বিতীয় ভাগের ১০ মিনিটের সময় ভৈরব থানার এসআই রেজাউল করিম গোল দিয়ে সমতা আনেন। নির্ধারিত সময়ে আর কোনো দল গোল করতে না পারায় ১-১ গোলে খেলাটি অমীমাংসিত থেকে যায়।

প্রথম গোলদাতা এসআই রাসেল মিয়া তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘ছোটবেলা ফুটবল খেলেছি। পুলিশে এসে খেলার সময় কোথায়? তবে আজ গোল দিতে পেরে মনে হয়েছে, করোনাকে জয় করে ফেলেছি।’এ সময় কর্তব্যে মনোযোগ বাড়িয়ে করোনাকে বিদায় জানানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্তি করেন এসআই রাসেল।

পুলিশ সদস্যদের সব সময় মাঠে থাকতে হচ্ছে। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কাজটি করতে করতে তাঁদের মধ্যেও একঘেয়েমি চলে এসেছিল। প্রীতি ম্যাচটি মূলত তাঁদের মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার একটি চেষ্টামাত্র।

দলের পক্ষে গোল দিয়ে সমতা ফিরিয়ে আনতে পেরে বেজায় খুশি ভৈরব থানার রেজাউল করিমও। তিনি বলেন, ‘গোল খেয়ে ও দিয়ে দুই ভাবেই করোনাকে বিদায় জানালাম। তবে হ্যাঁ, এখন সামনে কাজ দিয়ে তা করে দেখানোর পালা।’

ভৈরব থানা দলের পক্ষে ডিফেন্সে খেলেন এসআই মতিউজ্জামান। আজকের ফুটবল ম্যাচটি নিয়ে শুরু থেকে তাঁর আগ্রহ ছিল অন্যদের তুলনায় কিছুটা বেশি। মতিউজ্জামান বলেন, ‘পুলিশের বিনোদন বলতে দৃশ্যমান তেমন কিছু নেই। কাজের মধ্যেই সব। তবে আজকের খেলায় জয়-পরাজয় না এলেও সবার মধ্যে আনন্দ ও খুশি ছিল। আমার মনে হয়, এ মুহূর্তে এ ধরনের কিছু একটা প্রয়োজন ছিল।’

ভৈরব থানা দলের অধিনায়ক ওসি মো. শাহিন বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারের নানা দপ্তর কাজ করছে। পুলিশও তাদের একটি। তবে পুলিশ সদস্যদের সব সময় মাঠে থাকতে হচ্ছে। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কাজটি করতে করতে তাঁদের মধ্যেও একঘেয়েমি চলে এসেছিল। প্রীতি ম্যাচটি মূলত তাঁদের মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার একটি চেষ্টামাত্র।

নৌ থানা দলের অধিনায়ক ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই ম্যাচ দিয়ে চেয়েছিলাম আত্মবিশ্বাসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে। মনে হয়, সফল হয়েছি। এখন ফের করোনা প্রতিরোধের চূড়ান্ত খেলায় অধিক মনোযোগ দেওয়ার পালা।’

ভৈরব থানা দলে গোলকিপারের দায়িত্ব পালন করেন এসআই মাজহারুল ইসলাম ও নৌ থানার পক্ষে ছিলেন কনস্টেবল রেজাউল হক। ম্যাচ শেষে উভয় দলের খেলোয়াড়দের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়া হয়।