আত্মসাৎ করা ৪৮ লাখ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ

■ অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক জাহান আরা খানমকে আত্মসাৎ করা টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

■ ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টাকা জমা দেওয়া হয়নি।

■ ৩৪টি চালানের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ওই টাকা জমা দেখানো হয়েছে।

নড়াইল সদর হাসপাতালের আত্মসাৎ করা সেবা ফির ৪৮ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক জাহান আরা খানমকে ওই টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে।

জাহান আরা খানম ওরফে লাকি (৫৩) নড়াইল শহরের আদালতপুরের মৃত তছিকুল ইসলামের মেয়ে।

এ সম্পর্কে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক প্রেমানন্দ মণ্ডল গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘হিসাবরক্ষক জাহান আরা খানম ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত আছেন। ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) শামিউল ইসলাম চিঠি দিয়েছেন জাহান আরা খানমকে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি চিঠিটি হাতে পেয়েছি।’

হাসপাতাল সূত্রে জানায়, জাহান আরা খানমকে লেখা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আপনার বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে আপনার কর্তৃক ট্রেজারি চালান জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা ৪৮ লাখ ১৭ হাজার ৯১২ টাকা সরকারি কোষাগারে জমাদানপূর্বক চালানের কপি অত্র অধিদপ্তরে পাঠানোর জন্য বলা হলো।’

এ বিষয়ে জানতে জাহান আরা খানমের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। খুদে বার্তা দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্র জানায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ফি, জরুরি বিভাগ ফি, ভর্তি ফি, প্যাথলজি ফি, এক্স–রে ফি, আলট্রাসোনোগ্রাফি ফি, কেবিন ফি, অ্যাম্বুলেন্স ফি, অপারেশন ফি, কোভিড-১৯ ফিসহ অন্যান্য ফি সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। এসব ফি সোনালী ব্যাংকের চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয়। সদর হাসপাতালের এসব ফির টাকা নড়াইল সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় জমা হওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ২০ মাস ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। কিন্তু টাকা জমার জাল চালান কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ৩৪টি চালানের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেখানো হয়েছে। বাস্তবে টাকা জমা হয়নি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিষয়টি তদন্ত করতে গত ৭ এপ্রিল পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছর ১৪ এপ্রিল জাহান আরা খানমের বিরুদ্ধে হাসপাতালের ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক আবদুস শাকুর নড়াইল সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই জিডির ভিত্তিতে ২৪ এপ্রিল জাহান আরা খানমের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল। তিনি মামলাটি তদন্তও করছেন।

মাহফুজ ইকবাল বলেন, মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুতই এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে প্রথম আলোয় গত বছর ৮ এপ্রিল ‘নড়াইল সদর হাসপাতাল : সেবা ফির টাকা নয় ছয়’ এবং ২৬ এপ্রিল ‘হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা দায়ের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।