আত্রাইয়ের চরের বালুতে স্বপ্ন বুনেছেন কৃষকেরা

আত্রাই নদের বালুচরে সবজি চাষ করেছেন কয়েকজন কৃষক। গত শুক্রবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জের জয়গঞ্জেছবি: প্রথম আলো

খরস্রোতা আত্রাই নদের এক পাশে দিনাজপুরের খানসামা, অন্য পাশে বীরগঞ্জ উপজেলা। এখন চলছে শুষ্ক মৌসুম। আত্রাইয়ের উভয় পাড়ে বালুর চর। সেই চরে এখন সবুজের সমারোহ। চরের বালুতে কুমড়া, লাউ, ভুট্টা, রসুনসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন প্রায় ২০ জন কৃষক।

বালুর মধ্যে ৬ ফুট অন্তর ছোট ছোট গর্ত। গর্তে মাটির সঙ্গে ইউরিয়া আর গোবর মিশিয়ে সপ্তাহখানেক ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে সেই গর্তে দেওয়া হয় ৩ থেকে ৪টি কুমড়া বা লাউয়ের বীজ। সেখান থেকে অঙ্কুর বের হয়ে এখন বালুর চরে সবুজের সমারোহ।

গত শুক্রবার বীরগঞ্জ উপজেলার জয়গঞ্জ চর ঘুরে দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় তৈরি করা হয়েছে ভুট্টার খেত। নদের কিনারায় লাগানো হয়েছে মিষ্টিকুমড়া, লাউ আর রসুন। নদ থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি দেন কৃষকেরা। কুমড়াগাছের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত দেখা মেলে ফুল আর কুমড়া।

এ চরে ২ একর জায়গায় মিষ্টিকুমড়ার আবাদ করেছেন শতগ্রামের বাসিন্দা হাসেম আলী (৪৮)। তিনি বলেন, ৩ বছর ধরে চরে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করছেন তিনি। চাষ করতে জমির ভাড়া কাউকে দিতে হয় না। মিষ্টিকুমড়া চাষে তাঁর একরপ্রতি খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকলে আর ঠিক দাম মিললে প্রতি একরে ১ লাখ টাকার মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করতে পারবেন।

আত্রাই নদের চরে সবজির গাছ পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। গত শুক্রবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জের জয়গঞ্জে
ছবি: প্রথম আলো

একই গ্রামের আরেক কৃষক সুজায়েত আলী (৫০) বলেন, ‘গতবার বিলেতি (মিষ্টিকুমড়া) আর কদু (লাউ) গাইড়্যা ধরা খাইছি। ফল ভালো হইছিল, করোনায় সর্বনাশ কইরা দিছে। কোনো পাইকারও আসে নাই, নদীত ফালায়া দিছি। এইবারও লাগাইছি। দেখি কী হয়।’

আত্রাইয়ের চর এলাকায় প্রায় দেড় শ মানুষের বাস। তাদের সবাই জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার নদীভাঙন এলাকা থেকে এসে চরে বসতি গড়েছে। চরের জমিতে কৃষকদের ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন স্থানীয় যুবক সোলায়মান আলী (৪০)। সোলায়মান বলেন, আত্রাই নদে বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন তিনি। ৩–৪ বছর ধরে দেখছেন চরে কৃষকেরা বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। কিন্তু এবার মৌসুম পেরিয়ে গেলেও কাউকে চাষ করতে না দেখে তিনি কৃষকদের নিয়ে আলোচনা করেন। বোঝানোর পর কৃষকেরা চাষ করতে রাজি হন। চরের মধ্যে প্রায় ১৪ একর জমিতে এভাবে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তৌহিদ ইকবাল বলেন, দিনাজপুরের ওপর দিয়ে ছোট–বড় ১৯টি নদ–নদী প্রবাহিত। প্রায় সব কটি নদ–নদীতেই শুষ্ক মৌসুমে চর জাগে। নদ–নদীতে জেগে ওঠা প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে। দুই হাজারে বেশি চাষি চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত।

তৌহিদ ইকবাল আরও বলেন, সাধারণত বালুর মধ্যে সবজির চাষ হয় না। কিন্তু চরের বালুতে কিছু পলি জমা পড়ে জায়গাটা উর্বর হয়। কৃষকেরা এই পলির সঙ্গে মাটি আর জৈব সার মিশিয়ে চাষাবাদ করছেন। চরের চাষিদের নিয়ে ভবিষ্যতে কর্মশালার আয়োজন করে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষির ধারণা দেওয়া হবে।