জলে পাতি সরালি আর বালিহাঁসসহ নানা প্রজাতির পাখির অবাধ বিচরণ। মাঝেমধ্যেই মুক্ত আকাশে ডানা মেলে ওড়াউড়ি করছে হাজারো পাখি। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের মধুবন, কলোনিপাড়া ও কুঞ্জবন এলাকায় আত্রাই নদের বুকে এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে।
নদের তীরের গাছের ডালেও বসছে এসব পাখি। গত সোমবার মধুবন, কলোনিপাড়া ও কুঞ্জবন এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে। জানা যায়, সারা বছরই এসব এলাকায় আত্রাই নদে নানা ধরনের পরিযায়ী ও দেশীয় প্রজাতির পাখির বিচরণ থাকে। তবে শীতকালে পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে বেশি। এ বছর নভেম্বর মাসের শুরু থেকে নানা জাতের পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর হতে থাকে নদের বুক ও আশপাশের এলাকা।
নদের তীরের পশ্চিম পাশে মহাদেবপুর উপজেলা সদরের কলোনিপাড়া মহল্লা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মহল্লার বাসাবাড়ির আশপাশের গাছপালাসহ বিভিন্ন ফলদ, বনজ বাগানে পাখিদের আনাগোনা। নদের পাশ দিয়ে পাকা বাঁধের রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ। পাখিদের কিচিরমিচিরে মুখর পুরো এলাকা।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ১০-১২ বছর ধরে জায়গাটিতে পরিযায়ী পাখি আসছে। বেশ কয়েক প্রজাতির পাখির মধ্যে বালিহাঁস ও পাতি সরালির সংখ্যাই বেশি। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও দেশি প্রজাতির শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নিহাঁস ও বক নদের ওই এলাকা মুখর করে রাখে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিহা নিশাতের (২১) বাড়ি মহাদেবপুরের কুঞ্জবন এলাকায়। তিনি বলেন, নিজের এলাকায় পাখির অভয়াশ্রম দেখে ভালো লাগে। আত্রাই নদের ওপর নির্মিত একটি নতুন সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে অনেকেই আসা-যাওয়ার পথে পাখি দেখতে দাঁড়িয়ে যান। বাড়িতে থাকাকালে পাখিদের আনাগোনা দেখে মন উৎফুল্ল হয়ে যায়।
নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী দুই বন্ধু নাইমুল হাসান ও জারিফ মাহমুদ। নওগাঁ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে পাখি দেখতে এসেছিলেন মহাদেবপুর নতুন ব্রিজ এলাকায়। নাইমুল ও জারিফ বলেন, এখানে একসঙ্গে এত পাখি দেখে মন ভরে যায়। বারবার আসতে ইচ্ছে করে।
পরিবেশবাদী সংগঠন প্রাণ ও প্রকৃতির মহাদেবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি কাজী নাজমুল বলেন, শুরুতে এলাকার কিছু মানুষ পরিযায়ী পাখি অবাধে শিকার করত। ২০১২ সালে পাখি ও বন্য প্রাণী রক্ষার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এলাকার কিছু তরুণ ও যুবক এক জোট হয়ে প্রাণ ও প্রকৃতি নামের সংগঠন গড়ে তোলেন। সংগঠনের কর্মীরা স্থানীয় ব্যক্তিদের সচেতন করার পাশাপাশি পাখি হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
কাজী নাজমুল আরও বলেন, আগে আত্রাই নদের মধুবন ও কুঞ্জবন এলাকায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হতো। আন্দোলনের ফলে প্রশাসন ওই এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে। পাখিরা এখন নিরাপদে আছে।