আদা বেগুন চাষে চাষির মুখে হাসি

আদাখেতে লাগানো বেগুনগাছ থেকে বেগুন তুলছেন সাবু মিয়া নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা। মেনানগর গ্রাম, তারাগঞ্জ উপজেলা, রংপুর, ৬ ডিসেম্বর
প্রথম আলো

‘আগোত মুই খালি ধানের আবাদ করছুনুং। গত দুই বছর থাকি আদা আবাদ করি, ধানের চেয়া চার গুণ লাভ করছুং। এই জন্যে মুই এ্যালা মোর উচা জমিগুলাত আদার আবাদ করোং।’ এসব কথা বলেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার মেনানগর গ্রামের সামসুল হক। তিনি আরও বলেন, এবার ২৪ হাজার টাকা খরচ করে ২৬ শতক জমিতে আদা–বেগুন চাষ করেছেন। খরচ বাদে লাভ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।

শুধু সামসুল হক নন, লাভ বেশি হওয়ায় উপজেলার অনেক চাষিই ধানের পরিবর্তে আদা চাষে ঝুঁকেছেন। তারাগঞ্জের পাঁচটি ইউনিয়নে এখন মাঠের পর মাঠে আদা আর বেগুনের খেত।

সয়ার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম বলেন, আদা–বেগুনের চাষ তারাগঞ্জের চাষিদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। আদা চাষ করে অনেকে সচ্ছল হয়েছেন। অনেক যুবক বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন। দিনমজুরেরাও অভাব দূর করেছেন।

চাষি সামসুল হক নিজের জমিতে লাগানো আদাখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত। মেনানগর গ্রাম, তারাগঞ্জ, রংপুর, ৬ ডিসেম্বর
প্রথম আলো

তারাগঞ্জ উপজেলার প্রবেশমুখেই চোখে পড়ে মাঠজুড়ে আদা, বেগুন আর মরিচের খেত। কেউ খেত পরিচর্যা করছেন, কেউ আদাখেতে লাগানো বেগুন তুলছেন। মেনানগর গ্রামে ঢোকার মুখেই আবদুর রহমানের বাড়ি। আগে তাঁর সংসার চলত অনেক কষ্টে। বসতভিটে ছাড়া কোনো জমি ছিল না। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাতেন। স্ত্রী–সন্তান নিয়ে প্রায় উপোস থাকতে হতো। পাঁচ বছর আগে অন্যের ৩০ শতক জমি বর্গা নেন আবদুর রহমান। সেখানে আদা, বেগুন আর মরিচের চাষ করেন। প্রথম বছরেই লাভ হয় ৫৫ হাজার টাকা। পরের বছর ৪০ শতকে আদার চাষ করে আয় করেন ৮০ হাজার টাকা। ওই টাকায় টিনের বাড়ি করেছেন। বন্ধক নেওয়া ৭৫ শতক জমিতে এবার আদা আর বেগুনের চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার আদা–বেগুন বিক্রি করেছেন।


আদাখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত বুড়িরহাট গ্রামের একরামুল হক। প্রতিবারের মতো এবারও তিনি ৭২ শতকে আদা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ৫০ শতক জমির ১ লাখ ২০ হাজার টাকার আদা বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ধানের চেয়ে আদা চাষে লাভ বেশি। ১ একর জমিতে আমন ধান চাষ করতে ব্যয় হয় ২০-২২ হাজার টাকা। উৎপাদিত ধান বিক্রিও হয় ২২-২৩ হাজার টাকায়। কিন্তু ১ একরে আদা চাষে ব্যয় হয় ৮০-৯০ হাজার টাকা। আর বিক্রি হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকায়। ফলে একরে লাভ থাকে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সয়ার ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে ময়নুল ইসলামের বাড়ি। একসময় তিনি দিনমজুরি করতেন। এখন আদা বিক্রি করে বছরে দুই লাখ টাকা আয় করছেন। ৬০ শতক জমি কিনেছেন, বাড়িও পাকা করেছেন। তিনি বলেন, আদা চাষে ঝামেলা কম। অন্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি। মার্চ মাসে জমি চাষ করে আদা রোপণ করা হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে খেত থেকে আদা তোলা হয়। সাথি ফসল হিসেবে বেগুন ও মরিচের চাষ করে বাড়তি আয় করা যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, ধান চাষের চেয়ে আদা চাষে লাভ বেশি। তাই ধনী-গরিব—সবাই আদা চাষে ঝুঁকছেন। এখানকার আদা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও রোগবালাই দমনে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।