আদালতে বিয়ে করে ধর্ষণ মামলায় জামিন পেলেন চিকিৎসক

আদালত
প্রতীকী ছবি

রাজশাহীতে আদালতে বিচারকের উপস্থিতিতে বিয়ে করেছেন ধর্ষণ মামলার আসামি এক চিকিৎসক। আজ বুধবার রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই বিয়ে হয়। পরে আসামিকে জামিন দেন আদালতের বিচারক মো. মনসুর আলম। বিয়েতে ৫০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়। এর মধ্যে ২৫ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ এবং ২৫ লাখ টাকা বাকি রাখা হয়।

আসামি এস এম সাখাওয়াত হোসেন রানা (৪৬) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার। তিনি বিয়ে করলেন যে নারীকে, তিনি একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী। ওই নারীর (২৭) বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। তিনি রাজশাহী নগরে বান্ধবীর বাসায় সাবলেট থাকেন। আর চিকিৎসকের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পোরশায়। তাঁর স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। তিনি রাজশাহী নগরে ভাড়া বাসায় থাকেন।

ওই শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ২৫ জুলাই চিকিৎসক সাখাওয়াত গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন। এরই মধ্যে গত ১২ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ২৫ জুলাই চিকিৎসক সাখাওয়াত গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন। আজ বাদীকে আদালতে বিয়ে করে জামিন পেয়েছেন তিনি।

আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, পৃথক বই লেখার সূত্র ধরে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহীর একঠী ছাপাখানায় বাদী–বিবাদীর পরিচয়। পরে তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হতো। এরই মধ্যে তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ওই চিকিৎসক ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু বিয়ে করছিলেন না। এ কারণে ওই তরুণী তাঁকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন। তবে গত ২৫ জুলাই চিকিৎসক রানা ওই তরুণীর ভাড়া বাসায় গিয়ে তাঁদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের একটি ভিডিও চিত্র দেখিয়ে বলেন, তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে এই ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে দেবেন তিনি। এভাবে ভয় দেখিয়ে চিকিৎসক রানা ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। এরপর ওই ভিডিও চিত্র নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। তখন ওই নারীর বান্ধবী বাইরে থেকে ঘরের দরজা আটকিয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে নগরের রাজপাড়া থানা-পুলিশ চিকিৎসক রানাকে সেখান থেকে আটক করে। এরপর ওই তরুণী বাদী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় পর্নোগ্রাফি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

গ্রেপ্তারের দিনই অভিযুক্ত চিকিৎসকের কাছ থেকে ওই তরুণীকে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র জব্দ করেছিল পুলিশ। সেটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। ভিডিওর সঙ্গে ওই তরুণী ও চিকিৎসকের তিন কপি করে ছবিও পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষার পর সিআইডি মতামত দেয়, ভিডিওর দুই নারী-পুরুষ এবং পাঠানো নারী-পুরুষের ছবির মধ্যে মিল রয়েছে। ভিডিওটি এডিট (বিকৃত সম্পাদনা) করা নয়। এ ছাড়া চিকিৎসক রানাও জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগ স্বীকার করেন। তাই তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

রানার বাবাসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা বেশ কিছুদিন ধরে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। সবশেষ গত সোমবার রানার বাবা তাঁর ছেলেকে বিয়ে করতে প্রস্তাব দেন। সবকিছু ভেবেচিন্তে পরে বিয়েতে রাজি হই।
ভুক্তভোগী তরুণী

আজ বিয়ের পর বিকেলে ওই তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, রানার বাবাসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা বেশ কিছুদিন ধরে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। সবশেষ গত সোমবার রানার বাবা তাঁর ছেলেকে বিয়ে করতে তাঁকে প্রস্তাব দেন। সবকিছু ভেবেচিন্তে পরে বিয়েতে রাজি হন তিনি। এরপর সেদিনই আদালতে একটি পিটিশন করা হয় যে মামলার বাদী ও আসামি বিয়ে করতে চান। আসামিকে যেন জামিন দেওয়া হয়। এদিন বিচারক আসামিকে বুধবার (আজ) আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। বিচারক সিদ্ধান্ত দেন, আদালতেই তাঁদের বিয়ে হবে। সে অনুযায়ী আজ চিকিৎসক রানাকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এরপর বিচারকের সামনেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

ওই তরুণী আরও বলেন, বিয়েতে তাঁর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাওয়া-পাওয়া ছিল না। রানার পরিবারই ৫০ লাখ টাকার দেনমোহর নির্ধারণ করে। এর মধ্যে ২৫ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করা হয়। তাঁর পক্ষে আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম এবং রানার বন্ধু মাসুদুজ্জামান কাজল সাক্ষী হয়েছেন। আর রানার পক্ষে তাঁর বাবা মোখলেসুর রহমান, ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলাম এবং হ‌ুমায়ুন কবীর নামে আরেকজন সাক্ষী হয়েছেন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আদালত চিকিৎসক রানার জামিন মঞ্জুর করেছেন। কাগজপত্র প্রস্তুত হলে আজই তিনি ছাড়া পাবেন।