আদালতে বাদীকে বিয়ে করলেন ধর্ষণ মামলার আসামি, জামিনে কারামুক্ত

কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালত
ফাইল ছবি

কুমিল্লার আদালতে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামির (৩০) হাতকড়া পরা অবস্থায় বিয়ে হয়েছে। ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে মামলার বাদীর সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার তাঁর বিয়ে হয়। এরপর আসামি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আর কনে গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। আজ বুধবার কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ওই আসামি জামিনে মুক্তি পেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার ও আদালতের একটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ভাঙ্গা পুষ্করিণী গ্রামের এক সৌদিপ্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে একই উপজেলার পারুয়ারা গ্রামের ওই ব্যক্তির মুঠোফোনে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। তাঁদের একান্ত মুহূর্তের কিছু ভিডিও করে রাখেন ওই ব্যক্তি। এরপর ওই ভিডিও দেখিয়ে গৃহবধূর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে অন্তত ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। ওই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় সেই ভিডিও তিনি প্রবাসী স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠান। এসব কারণে ওই গৃহবধূর স্বামী তাঁকে গত অক্টোবরে তালাক দেন।

এ অবস্থায় সংসার হারিয়ে ওই মাসেই ওই নারী চৌদ্দগ্রাম থানায় ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এরপর এ নিয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মাধ্যমে বিষয়টি আপস করার কথা উঠলে ওই গৃহবধূ বিয়ের শর্তে আপসে রাজি হন। উভয়ের পরিবার বিয়ের সিদ্ধান্ত মেনে আদালতে আসে। মঙ্গলবার কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাব উল্লাহ আপসের শর্তে ওই ব্যক্তিকে জামিন দেন এবং আদালত প্রাঙ্গণে বিয়ের নির্দেশনা দেন। পরে কাজী মাওলানা মো. অলি উল্লাহ ভূঁইয়াকে ডেকে এনে বিয়ের আয়োজন করা হয়। এতে দেনমোহর ধরা হয় ১০ লাখ টাকা।

বাদী ও আসামির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এখন আপসের কারণে আদালত জামিন দিয়েছেন এবং বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন।
তারেকুল আলম, আসামিপক্ষের আইনজীবী

বাদীপক্ষের আইনজীবী সরকার গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাদী ও আসামিপক্ষ এলাকায় বিয়ের শর্তে আপস করে এসেছে। আদালত আপসের শর্তে আসামিকে জামিন দিয়েছেন। সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে বিয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই বিয়ে হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী তারেকুল আলম বলেন, বাদী ও আসামির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এখন আপসের কারণে আদালত জামিন দিয়েছেন এবং বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. শাহজাহান আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, মঙ্গলবার কারাগারে ওই ব্যক্তির জামিনের কাগজ আসে। কিছু আইনি প্রক্রিয়া শেষে বুধবার সকালে তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।