আধিপত্যের দ্বন্দ্বে 'বলির পাঁঠা' সাধারণ পাহাড়িরা

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্যের দ্বন্দ্বে ‘বলির পাঁঠা’ হচ্ছে সাধারণ পাহাড়িরা। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গতকাল মঙ্গলবার থেকে নতুন করে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের ২৫ কিলোমিটার যাত্রাপথের অন্তত ৮টি ছোট–বড় বাজার ও দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এই দ্বন্দ্ব চলছে জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ও ইউপিডিএফ-প্রসীত খীসার মধ্যে। এর মধ্যে প্রথম দুটি দল জোটবদ্ধ। গতকাল থেকে আটটি বাজার বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। আগের দিন দলটি খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে যাত্রীবাহী বাসে পাহাড়িদের না তোলার ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করে। এর আগে গত বছরের ২০ মে থেকে পানছড়ি বাজার বন্ধ করে দেয়ইউপিডিএফ-প্রসীত খীসা। বর্তমানে বাজারটি চালু হলেও নতুন করে অন্য বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আহারউজ্জামান বলেন, অনেক আগে থেকেই পাহাড়ের একটি সংগঠন পানছড়ি বাজার বর্জন করেছিল। এবার তার পাল্টা হিসেবে আরেকটি গ্রুপ বাজার বর্জন করছে। পাল্টাপাল্টি বাজার বর্জন চলছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি দোকানপাট খুলতে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যাবে।’

গতকাল সকাল থেকে পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের স্বনির্ভর, শিবমন্দির, ছোটনালা, মুনিগ্রাম, কুড়াদিয়া, নালকাটা, লতিবান, কলেজ গেট, পুজগাং এলাকার দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের সদর ইউনিয়নের ভাইবোনছড়া বাজার খোলা থাকার পরও পাহাড়িরা বাজারে আসেনি। তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এ ব্যাপারে কথা বলতেও রাজি নয় তারা।

ভাইবোনছড়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের পক্ষ থেকে কীটনাশক, সার ও তেলের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বাজার বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়নি। কিন্তু পাহাড়িরা কী কারণে বাজারে আসেনি সেটা তিনি জানেন না।

গাড়িতে উঠতে না দেওয়ায় গত সোমবার থেকে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে হচ্ছে সাধারণ পাহাড়ি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। গাড়ি থামিয়ে কোনো পাহাড়ি উঠেছে কিনা তা তল্লাশি করা হয়। নালকাটা, দেওয়ানপাড়াসহ কয়েকটি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়।

গতকাল সকালে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারের গিয়ে দেখা যায়, বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। অটোরিকশা, মাহেন্দ্র ও পিকআপ স্টেশনেও কোনো যাত্রীবাহী গাড়ি দেখা যায়নি।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আঞ্চলিক দলগুলো প্রায় দেড় বছর ধরে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। সংঘাতের জের ধরে গত ১৮ মার্চ উপজেলা নির্বাচন শেষে ফেরার পথে ভোটের সরঞ্জামের গাড়িতে গুলিতে সাতজন নিহত হন। এর আগে গত বছরের ১৮ আগস্ট স্বনির্ভর বাজারে গুলিতে সাতজন প্রাণ হারান।

জানতে চাইলে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা বলেন, ইউপিডিএফের লোকজন সাধারণ পাহাড়িদের জিম্মি করে এক বছর যাবৎ পানছড়ি বাজারে আসতে দেয়নি। পাহাড়িরা এখন তাদের কথা অমান্য করে বাজারে আসা শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ইউপিডিএফের লোকজন বিভিন্ন বাজারে যেতে পারলে কেন পানছড়ি বাজারে যেতে পারবে না। তাই অন্যান্য বাজার আপাতত বন্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, পানছড়ি বাজারে শুকতারা নামে একটি আবাসিক হোটেলে জেএসএসের (এমএন লারমা) নেতারা আশ্রয় নেওয়ার কারণে গত বছরের ২০ মে পানছড়ি বাজার বন্ধ করে দেয় ইউপিডিএফ। তবে প্রথম থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইউপিডিএফ।