আবার প্রশ্নবিদ্ধ সেই সেচ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ

এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত করে ডিপিপি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

যশোর জেলার মানচিত্র

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আবার সেচ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত করে ডিপিপি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে ভবদহে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেচ প্রকল্প চলমান।

ভবদহ অঞ্চলের ভুক্তভোগী মানুষ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, ভবদহ অঞ্চলের ৫২টি বিলের পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ–নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এই অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়। বিল উপচে পানি ঢোকে বিলসংলগ্ন গ্রামগুলোতে। তাঁরা জানান, ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র উপায় এলাকার নদীগুলো দিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে জোয়ার–ভাটা চালু নিশ্চিত করা। এতে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি নির্দিষ্ট বিলে অবক্ষেপণের ফলে বিল উঁচু হয়ে উঠবে। পাশাপাশি ভাটায় স্বচ্ছ পানির স্রোতে নাব্যতা ফিরে পাবে নদীগুলো। এই পদ্ধতি টিআরএম (টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট—জোয়ারাধার)। সেচযন্ত্র বসিয়ে পানি সেচে ভবদহ জলাবদ্ধতার সমাধান মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। এতে কেবল অর্থের অপচয় হচ্ছে। সমস্যা জিইয়ে রেখে স্থায়ী ব্যবসার ফাঁদ তৈরি করাই এই সেচতত্ত্বের উদ্দেশ্য।

তবে পাউবো যশোরের কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারি মাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ভবদহে ২০টি পাম্প সেট (সেচযন্ত্র) বসানো হয়েছে। এর মধ্যে এখন প্রতিদিন ১৪টা সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ চলছে। সেচের ফলে গত বছর এই সময়ের চেয়ে এবার বিলগুলোতে এক মিটার পানি কম রয়েছে। বড় পরিসরে সেচের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এ জন্য ৫০ কোটি টাকার একটি ডিপিপি তৈরির কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। ৩৫ থেকে ৪০ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি সেচযন্ত্র বসানো হবে। কিছু সংযোগ খাল সংস্কার করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ডিপিপি পাউবোর প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে ডিপিপি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখানে প্রকল্প প্রস্তাবনা যাচাই কমিটির সভায় পাসের পর তা যাবে পরিকল্পনা কমিশনে। পরিকল্পনা কমিশনে পাসের পর তা বাস্তবায়ন শুরু হবে।

অভয়নগর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের কৃষক শিবপদ বিশ্বাস বলেন, সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে কোনো দিনও ভবদহ সমস্যার সমাধান হবে না। গত পাঁচ মাসে দুই ফুটের মতো জল কমেছে। এ বছর দীর্ঘদিন বৃষ্টি হয়নি। রোদে শুকিয়ে বেশির ভাগ পানি কমেছে। সেচে খুব একটা পানি কমেনি।

মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের কৃষক শেখর বিশ্বাস বলেন, গত বছর এই সময় বিলে যে পরিমাণ পানি ছিল, এবার তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পানি রয়েছে। সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে খুব একটা কমছে না। পানি যায় নদী দিয়ে। সেই নদী বুজে গেছে। আগে নদী খোলাসা করা দরকার।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বিল সংলগ্ন মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী শুকিয়ে সরু খালের মতো হয়ে আছে। নদীর কোনো কোনো অংশে অল্প পরিমাণ পানি রয়েছে। ভবদহ স্লুইসগেটের (২১ ভেন্ট) ওপর ১৪টি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র বসানো আছে। সেচযন্ত্র দিয়ে স্লুইসগেটের এক পাশের নদী থেকে পানি সেচে অপর পাশে নদীতে ফেলা হচ্ছে।

ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে ভবদহের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এতে অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয়নি। নতুন প্রকল্প হলে অর্থের অপচয় আরও বাড়বে। ভবদহ সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। এই প্রকল্পে এলাকার ভুক্তভোগী মানুষের মতামত গ্রহণ করা হয়নি। এই প্রকল্প গণবিরোধী এবং প্রকল্প গ্রহণ নীতিমালার পরিপন্থী। ভবদহ স্লুইসগেটের ২১ ভেন্ট (কপাট) এবং ৯-ভেন্টের মধ্য দিয়ে কেটে সরাসরি শ্রী নদীর সংযোগ দিলে সেচের চেয়ে বেশি পানি বের হবে। নদীর নাব্যতাও বাড়বে। টিআরএম বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।