আবাসন খাতের সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা

নকশা অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অনুমোদনে প্রতি শতকে করপোরেশনকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়। এর বাইরে উন্নয়ন ফির নামে প্রতি শতকে আরও ৩০ হাজার টাকা করে দিতে হয়, যা অন্য কোনো সিটি করপোরেশনে নেই।

কুমিল্লা নগরের প্রথম বহুতল ভবন সমতট ল্যাগাসী। কুমিল্লা জিলা স্কুল সড়ক এলাকায়।ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লায় আবাসন খাত সম্প্রসারণে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। অর্ধশতাধিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও এর বাইরে কিছু ব্যক্তি সিটি করপোরেশন এলাকায় বহুতল ভবন করে ফ্ল্যাট বিক্রি করছেন। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ফ্ল্যাটের খরচ ও বিক্রির ফারাক নিয়ে সংকটে রয়েছেন। তার ওপর করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আবাসন ব্যবসায় কিছুটা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশার অনুমোদন পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে। স্থানীয় আবাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।

আবাসন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর প্রথমে লকডাউন দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এরপর আবাসন ব্যবসায় কিছুটা ধস নামে। এর ওপর এই সময়ে রডের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। আগে প্রতি টন রড বিক্রি হতো ৫২ হাজার টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৪ হাজার টাকায়। সিমেন্টের বস্তা আগে ছিল ৩৮০ টাকা, এখন ৪৩৫ টাকা। ভবন নির্মাণের কাঠের দাম ২ হাজার থেকে বেড়ে ৪ হাজার টাকা হয়েছে। নির্মাণশ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। একই সঙ্গে রঙের দাম তিন দফা বেড়েছে। ইলেকট্রিক সামগ্রীর দাম ৩০ শতাংশ ও টাইলসের দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু ফ্ল্যাটের দাম বাড়েনি। উল্টো করোনাভাইরাসের প্রকোপে ফ্ল্যাটের বুকিং বাতিল করা হচ্ছে। ক্রেতা যাঁরা আগে বুকিং দিয়েছেন, তাঁরা নিয়মিত কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বেশির ভাগই কিস্তির টাকা নিয়মিত নির্ধারিত তারিখে পরিশোধ করতে পারছেন না।

ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশা অনুমোদন পেতেও ভোগান্তির কথা বলেছেন ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ। তিনজন ব্যবসায়ী দাবি করেন, নকশা অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অনুমোদন পেতে প্রতি শতকে সিটি করপোরেশনকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়। এর বাইরে উন্নয়ন ফির নামে প্রতি শতকে আরও ৩০ হাজার টাকা করে দিতে হয়, যা অন্য কোনো সিটি করপোরেশনে নেই।

এমআরসি বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী মশিউর রহমান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আবাসন খাতে আমরা বিনিয়োগ করছি। এতে কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এগুলো চিহ্নিত করে দূর করতে হবে। সমন্বয় করে পরিকল্পিত নগরী গড়ার পক্ষে কাজ করতে হবে।’

জানতে চাইলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন অব কুমিল্লার (আরইএইচএসি) সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, করোনায় বিদেশে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। উপার্জন কমে গেছে। কেউ দেশে চাকরি হারিয়েছেন। শিক্ষকতা পেশায় উপার্জন কমে গেছে। যে কারণে বহু ক্রেতা বরাদ্দ বাতিল করে টাকা ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ পুঁজি খাটিয়ে বসে আছেন। কিন্তু বিক্রি কম।

ফ্ল্যাট ব্যবসায় গতি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য গত ২৫ মে কুমিল্লা নগরের রেসকোর্স এলাকায় কুমিল্লা নগরের আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন অব কুমিল্লা (আরইএইচএসি) নামের একটি সংগঠন করেছেন। তিন বছর মেয়াদি ১৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি হলেন এভারগ্রিন লিভিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান আতিকউল্লাহ খোকন, সাধারণ সম্পাদক পদে গোল্ড সিলভার হোমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মরিয়ম বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ শোয়েব সোহেল।

আতিকউল্লাহ খোকন বলেন, কোনো কোনো আবাসন কোম্পানি এক ফ্ল্যাট তিনজনের কাছে বিক্রি করেছে। এতে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। মানুষ যেন ফ্ল্যাট কিনে প্রতারিত না হয়, সেই দিকটা দেখবে আরইএইচএসি। ব্যবসায়ীদের স্বার্থও দেখবে সংগঠনটি। মানুষের আস্থার জায়গা ঠিক রাখতে চান তাঁরা। যেন মানুষের আস্থা ফিরে আসে। এর আগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কুমিল্লায় আবাসন খাতে বদনাম করেছে। তারা ফ্ল্যাট বরাদ্দের নামে ক্রেতার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাদের সংগঠন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।