আমতলীতে পুলিশের লাঠিপেটায় ১৫ ব্যবসায়ী আহত

বরগুনার আমতলী উপজেলায় মাছ ও কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার অভিযোগ উঠেছে। এতে ১৫ ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। আহত ব্যবসায়ীদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা সড়কে বিক্ষোভ করেন। আমতলী পৌর শহরের বাঁধঘাট মাছ ও কাঁচাবাজারে বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার সাত দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ সাধারণ ছুটির মধ্যে মাছ ও কাঁচাবাজার সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুসারে বুধবার আমতলী পৌর শহরের মাছ ও কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে দুই পুলিশ সদস্য গিয়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের ওপর লাঠিপেটা করার অভিযোগ কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঞ্জু মিয়ার। মানুষ হুড়োহুড়ি করে পুলিশের হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ওই পুলিশ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীরা পুলিশের লাঠিপেটা থেকে রক্ষায় সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।

পুলিশের হামলায় অন্তত ১৫ ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। আহত আবদুল করিম, উজ্জ্বল হাওলাদার, মজিবুর মোল্লা, কাওসার মিয়া, মোজাম্মেল, রাজা মিয়া, রুবেল হাওলাদার, রাজিব, জাকারিয়া ও বাতেনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে লকডাউনে ব্যবসায়ীদের নিয়ম অনুসারে ব্যবসা করতে বলায় তাঁরা পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলে দাবি করেন আমতলী থানার এসআই আবদুল মান্নান। ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর বেলা ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবসায়ীদের শান্ত করেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, অহেতুক পুলিশ মাছ ও কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের মারধর করেছেন। পুলিশের মারধরে মাছ ও কাঁচাবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ হুড়োহুড়ি করে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশের লাঠিপেটা থেকে রক্ষায় ব্যবসায়ীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। পরে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে ব্যবসায়ীরা শান্ত হন।

মুদি মনিহারি ব্যবসায়ী আহত আবদুল করিম বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দোকান খোলামাত্র এসআই মান্নান এসে কিছু না বলেই মারধর শুরু করেন। তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ আমার ১০ ব্যাগ মুড়ি রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন।’

কাঁচা পণ্যের ব্যবসায়ী আহত বৃদ্ধ মো. মজিবুর মোল্লা বলেন, ‘কিছু না বলেই আমাকে মারধর শুরু করেছে। আমি দিশেহারা হয়ে ইউএনও স্যারের দোহাই দিয়েছি, কিন্তু তাতেও রক্ষা পাইনি। আমাকে লাঠি দিয়ে অন্তত ১০টি আঘাত করেছে।’

কাঁচা পণ্যের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হাওলাদার বলেন, ‘পুলিশের এসআই মান্নান ও দুই পুলিশ সদস্য এসে আমাকে বেধড়ক মারধর করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার সাত হাজার টাকার বাঙ্গি সড়কে ফেলে নষ্ট করে দিয়েছেন।’

মারধরের শিকার মৎস্য ব্যবসায়ী রাজিব, কাওসার ও জাকারিয়া বলেন, ‘পুলিশ এসে আমাদের ওপর বিনা কারণে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।’

কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান হিমু গাজী বলেন, ‘নিয়ম মেনেই কাঁচা ও মাছ বাজার ব্যবসায়ীরা দোকান খুলেছে। কিন্তু পুলিশের এসআই আবদুল মান্নান ও তার সহযোগীরা ব্যবসায়ীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে আমার অনেক ব্যবসায়ী আহত হয়েছে।’

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার বলেন, লকডাউনে দোকান খোলা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটু ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল, তা সমাধান হয়েছে।

আমতলী ইউএনও আসাদুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে ব্যবসায়ীদের সামাজিক দূরত্ব রজায় রেখে সরকারি নির্দেশনা মেনে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। পুলিশের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনায় উভয় পক্ষকে শান্ত করা হয়েছে।’