‘আমার কী হবে, ছোট ভাইটার কী হবে?’

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার শিকার শহীদুন্নবীর মেয়ে জেবা তাসনিয়ার হাতে ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর। রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

‘এখন কী হবে আমার বিধবা মায়ের, আমার আর ছোট ভাইটার। আমি চিকিৎসক হতে চাই। তার কী হবে? ছোট ভাইটা কি পারবে পড়াশোনা করতে?’

এমন নানা অনিশ্চয়তার কথাগুলো জেবা তাসনিয়ার। তিনি লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার শিকার আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবীর মেয়ে।

আজ রোববার জেবা ও তাঁর চাচা আবু ইউসুফ মো. তৌহিদুন্নবী লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফরের সঙ্গে দেখা করেন। জেলা প্রশাসকের মিলনায়তনে সাক্ষাৎ শেষে জেবা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

জেবা বলেন, ‘ওরা (হামলাকারীরা) বিনা দোষে বাবাকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করল। বাবার মুখটাও শেষ বিদায়ের সময় দেখতে পারলাম না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন—ওদের ফাঁসি চাই।’

গত ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় পাটগ্রামের বুড়িমারী এলাকায় পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবীকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

জেবা রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেছেন। তাঁর ছোট ভাই আবু তাহের মো. আশিকুন্নবী একই প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।

সাক্ষাৎকালে জেলা প্রশাসক জেবা ও তাঁর ভাই আবু তাহেরকে পড়াশোনাসহ অন্যান্য বিষয়ে সহায়তা করার আশ্বাস দেন। এর অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেবার হাতে ২০ হাজার টাকার একটি চেক দেওয়া হয়।

জেবার চাচা রংপুর কারমাইকেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু ইউসুফ মো. তৌহিদুন্নবী। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাই শহীদুন্নবী ছিল বইপ্রিয় ও ধর্মভীরু মানুষ। তবে সে ধর্মান্ধ ছিল না। সেই তাঁকেই কি না পবিত্র কোরআন অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে খুন করা হলো! আমরা দ্রুত এর ন্যায়বিচার চাই।’

আমার ছোট ভাই শহীদুন্নবী ছিল বইপ্রিয় ও ধর্মভীরু মানুষ। তবে সে ধর্মান্ধ ছিল না।
আবু ইউসুফ মো. তৌহিদুন্নবী, সহযোগী অধ্যাপক, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর

গত ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় পাটগ্রামের বুড়িমারী মসজিদে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবীকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। তিনি রংপুর নগরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার বাসিন্দা। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক।

জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, সেদিনের জঘন্য অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ন্যায়বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহল কাজ করে যাচ্ছে।