‘আমি জানি এবার পাস করব না, ভোটারদের সচেতন করছি’

নওগাঁর বদলগাছির কোলা ইউপির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান মোটরসাইকেলে লম্বা হর্ন লাগিয়ে একাই নির্বাচনের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ভান্ডারপুর, কোলা ইউপি কার্যালয়ের সামনে, ২৫ নভেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা। স্থান নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার চকতাহের গ্রামের মোড়। সেখানে স্বতন্ত্র এক চেয়ারম্যান প্রার্থী তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে লাগানো মাইকে বলছিলেন, ‘আমার পথসভার আমি নিজেই সভাপতি, নিজেই বক্তা আবার শ্রোতাও। আপনারা এ–ও জানেন, আমি নিজে একা আমার নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। আমার কোনো কর্মী নেই। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসিনি। আমি তো পড়িইনি, পাস করব কীভাবে?’

তাঁর এসব কথা শুনছিলেন জন দশেক ভোটার। বক্তব্যের শেষে একজন ভোটার তাঁকে ওই মোড়ের একটি চায়ের দোকানে নিয়ে চা পান করান। এর পর তিনি সেখান থেকে চলে যান।

উপজেলার কোলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের স্বতন্ত্র ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম এইচ এম আসাদুজ্জামান। তাঁর প্রতীক রজনীগন্ধা ফুল। তিনি একটি এক্সেল মোটরসাইকেলে মাইকের লম্বা হর্ন লাগিয়ে একাই নির্বাচনী এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ২৮ নভেম্বর এই উপজেলার আটটি ইউপিতে নির্বাচন হবে।

কোলা ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এক ডজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীনুর ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী আল মাহমুদুল হাসান, এইচ এম আসাদুজ্জামান, মোছা. সেলিনা মির্জা, আসাদুর রহমান চৌধুরী, মো. খায়রুল ইসলাম, মো. জাফর ইকবাল, মো. ফজলে রাব্বী ফারুকী, মো. ফয়সল ওয়ালিদ, মো. মেহেদী মাসুদ, শফিকুল ইসলাম ও মো. হায়দার আলী। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ২০ হাজার ১৮২ জন।

সরেজমিন দেখা গেছে, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুজ্জামানের মোটরসাইকেলের পেছনে মাইকের লম্বা হর্ন লাগানো। আবার মোটরসাইকেলের পেছনে তাঁর একটি পোস্টার টাঙানো রয়েছে। তিনি নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে এলাকায় নির্বাচনী প্রচার করছেন। তিনি যেখানে যাচ্ছেন, তাঁর প্রচারের ‘স্টাইল’ দেখছেন লোকজন। নির্বাচনী এলাকার হাট-বাজারেও পথসভা করছেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসাদুজ্জামানের বাড়ি কোলা ইউনিয়নের কয়া ভবানীপুর গ্রামে। তিনি বিয়ে করেননি। কোলা ইউপির চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে তাঁর প্রতীক ছিল রজনীগন্ধা ফুল। কিন্তু ওই নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এবার নির্বাচনে তিনি রজনীগন্ধা ফুল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর কোনো কর্মী নেই। তিনি নিজেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

চকতাহের গ্রামে লিটন মিয়া বলেন, আসাদুজ্জামান তেমন পোস্টারও লাগাননি। তিনি একাই নিজের প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁর তেমন কর্মী-সমর্থক নেই। তিনি কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে একইভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তবে উপনির্বাচন স্থগিত হওয়ায় ভোট হয়নি।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার ঘরসংসার নেই। তাই পিছু টানও নেই। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে ২৪ ঘণ্টা নিজেকে জনসেবার কাজে নিয়োজিত রাখার সুযোগ রয়েছে, যা অন্য প্রার্থীরা করতে পারবেন না। আমি জানি, এবারের ভোটে পাস করব না। তবে, যদি কখনো পাস করি, তাহলে এই ইউনিয়নে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি থাকবে না। এটা আমার নির্বাচনী ইশতেহার। এই ইশতেহার ঘোষণা করতে সৎ সাহস লাগে। সেই সৎ সাহস অন্য অনেক প্রার্থীর নেই।’

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, অন্য প্রার্থীদের মতো তাঁর টাকা-পয়সা খরচ করার সামর্থ্য নেই। একজন শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁকে প্রচার চালাতে মোটরসাইকেলটি দিয়েছেন। তিনি মোটরসাইকেলে হর্ন লাগিয়ে একাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আপনি নিজেই বলছেন নির্বাচনে আপনার জেতার সম্ভবনা নেই, তাহলে নির্বাচনের মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ভোট চাচ্ছি না। যোগ্য ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করুক, তার জন্য ভোটারদের সচেতন করছি।’