আমিরের ১০ ফসলি জমি

আমিরের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটার পুঁটিমারি গ্রামে। ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পান। একই জমিতে নানা ফসল ফলাচ্ছেন তিনি।

জমিতে লাগানো গাছের পরিচর্যা করছেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পুঁটিমারী গ্রামের কৃষক আমির আলী। সম্প্রতি তোলা ছবি।প্রথম আলো

অন্যরা যখন একেক জমিতে একেক রকম ফসল ফলান, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কৃষক আমির আলীর (৫২) এক জমিতেই তখন ফলে ১০ রকমের ফসল। এতে আলাদা করে চাষ, সেচ ও যত্নের দরকার হয় না। উৎপাদন খরচও কম। বছর শেষে যখন হিসাব–নিকাশের পালা আসে, আমিরের তখন লাভই থাকে প্রায় তিন লাখ টাকা।

আমিরের বাড়ি উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুঁটিমারি গ্রামে। ২০১৭ সালে পান বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। একই জমিতে নানা রকম ফসল ফলাচ্ছেন ৩০ বছর ধরে। একসময়ের পাঁচ শতক জমির মালিক আমিরের এখন ১২ বিঘা (কেনা ও বন্ধক) জমি আছে। বছর শেষে আমিরের তিন লাখ টাকার মতো যে লাভ আসে, তা মাত্র ৩৭ শতক জমি থেকে।

এই ৩৭ শতক জমিতে আমির চাষ করেন পেয়ারা, পেঁপে, মরিচ, আখ, নবরত্ন কচু, আদা, হলুদসহ ১০ রকমের ফসল। সেই জমির আইলে লাগান নেপিয়ার জাতের ঘাস। বছরের একেক সময় এসব ফসলের ফলন ঘরে তোলেন আমির। বাজারে বিক্রির পর সব মিলিয়ে আয় হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা যায় উৎপাদন খরচে।

সম্প্রতি পুঁটিমারি গ্রামে আমিরের ১০ ফসলি জমিতে গিয়ে তাঁকে দুজন শ্রমিকের সঙ্গে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত দেখা যায়। গুনে গুনে ১০টি ফসলই পাওয়া গেল তাঁর জমিতে। অনেক কৃষকের ধারণা, একই জমিতে একাধিক ফসলের চাষ করলে একটার ছায়ায় বা সারে অন্য ফসলের ক্ষতি হয়। নিজের জমিতে দাঁড়িয়ে আমির বলছিলেন, তিনি এ জন্য চাষ শুরুর আগে ফসল নির্বাচন করেন। যেমন আদা ও হলুদ রোদে ভালো ফলন হয় না। একটু ছায়ার দরকার হয়। এ জন্য জমিতে প্রথমে পেঁপে, পেয়ারা ও আখ রোপণ করেন। এরপর মাটির নিচে আদা ও হলুদ লাগানো হয়।

এ ছাড়া জমি ফাঁকা থাকলে ঘাস হয়। ঘাস পরিচর্যা করতে শ্রমিক খরচ বাড়ে। এ জন্য পেঁপে, পেয়ারা ও আখের ফাঁকে ফাঁকে ডাঁটাশাক ও নবরত্ন কচু লাগানো হয়েছে। আদা ও হলুদ বড় হতে হতে শাক ও কচু উঠে যায়। যখন আদা ও হলুদ ওঠে, তখন শাক ও কচু থাকে না।

আমির বলেন, জমির আইল দিয়ে মানুষ চলাচল করে। তাই কলাগাছ ও নেপিয়ার ঘাস লাগানো হয়। কলাগাছও জমিতে আধো ছায়ার সৃষ্টি করে। আবার একই সার বারবার ব্যবহার করলে কোনো নির্দিষ্ট ফলের ফলন খারাপ হয়। তাই জমিতে বহু ফসল লাগিয়ে জৈব সার দিলে কোনো না কোনো ফসল তা গ্রহণ করে।

গত বছরের ডিসেম্বরে এই জমিতে ৩০টি পেঁপের চারা লাগান আমির। বর্তমানে সব কটিতে ফলন এসেছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে রোপণ করেন ৬০০টি নবরত্ন জাতের কচুগাছ। এপ্রিলে লাগান ১০ কেজি আদা ও হলুদ। । এর মধ্যে ডাঁটাশাকের বীজ ছিটিয়ে দেন জমিতে।

এসব ফসলের চাষ করতে এ বছর এখন পর্যন্ত আমিরের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে পেয়ারা, মরিচ তুলে বিক্রি শুরু করেছেন। জুলাই মাসের দিকে আখের ফলন পাওয়া যাবে।

সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাদেকুজ্জামান বলেন, আমির আলী পরিশ্রম ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষিতে সাফল্য পেয়েছেন।