আরও একজনের লাশ উদ্ধার, এখনো নিখোঁজ ২

মোংলার পশুর নদের হাড়বাড়িয়া এলাকায় ১৫ নভেম্বর রাতে একটি বিদেশি জাহাজের ধাক্কায় এমভি ফারদিন-১ নামের বাল্কহেডটি ডুবে যায়
ছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া এলাকায় বিদেশি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কায় ডুবে যাওয়া কয়লাবোঝাই বাল্কহেডের নিখোঁজ আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে বন্দর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া থেকে ভাটার দিকে নদীতে ভাসমান অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার উদ্ধার করা লাশটি ওই বাল্কহেডের কর্মচারী রবিউল ইসলামের (১৮)। তাঁর বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি এলাকায়। এ নিয়ে ডুবে যাওয়া ওই বাল্কহেডের তিনজন কর্মচারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো রবিউলের বাবা বাল্কহেডের মাস্টার মো. মহিউদ্দীন (৬০) ও পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার জিহাদ ওরফে জিসান (২১) নিখোঁজ রয়েছেন।

বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন মোংলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হাসান বাবুল বলেন, গত সোমবার রাতে হাড়বাড়িয়ার ৯ নম্বর এ্যাংকর এলাকায়  এমভি ফারদিন-১ নামের বাল্কহেডটি ডুবে যায়। এ সময় বাল্কহেডের দুজন কর্মচারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয় এবং পাঁচজন নিখোঁজ হন। মঙ্গলবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেয়। তার পর থেকে নিখোঁজ কর্মচারীদের পরিবার তাঁদের লাশের সন্ধানে দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় খুঁজতে থাকে। এরই একপর্যায়ে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে হাড়বাড়িয়া ৯ নম্বর এলাকায় একটি লাশ ভাসতে দেখেন তাঁরা। এরপর তাঁরা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে রবিউলের ভগ্নিপতি নান্না মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার শ্যালক রবিউল (১৮) ও শ্বশুর মহিউদ্দীন (৬০) ডুবে যাওয়া ওই বাল্কহেডে চাকরি করতেন। ডুবে যাওয়া এলাকা থেকে অনেক দক্ষিণে প্রায় হিরণপয়েন্টের কাছাকাছি এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে লাশটি ভেসে ওঠে। সেখান থেকে আজ লাশটি উদ্ধার করে আনা হয়েছে।

এমভি ফারদিন-১ নামের ওই বাল্কহেডে কয়লা বা অন্য পণ্য পরিবহনের অনুমতি ছিল না। নিয়ম ভেঙে কয়লা তুলে বাল্কহেডটির ঢাকার মিরপুরের গাবতলীতে যাওয়ার কথা ছিল। নৌযানটির সার্ভে সনদও ছিল না। দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা থেকে প্রতিদিনই এ রকম অনেক নৌযান অবৈধভাবে পণ্য পরিবহন করে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত এই পথে নৌ দুর্ঘটনা ঘটছে। এমভি ফারদিন-১ নিয়ে চলতি বছরের ১১ মাসে মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনকালে পাঁচটি নৌডুবির ঘটনা ঘটে। এগুলোর সার্ভে সনদ ছিল না।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দীন বলেন, সোমবার রাতে ডুবে যাওয়া ফারদিন-১ বাল্কহেডের সার্ভে সনদ ছিল না। সেই সঙ্গে আমদানি হওয়া পণ্য পরিবহনের অনুমতি ছিল না। বাল্কহেডটি ১৫ দিনের মধ্যে নদী থেকে তুলতে মালিককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বন্দরের নিরাপদ নৌ চ্যানেলের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ উদ্ধারকাজ তদারক করবে।


চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে এমভি ফারদিন-১-এর মালিক মো. ফজলুল হক খোকন বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাল্কহেডটি নদী থেকে তোলার কাজ শুরু করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে এটি তোলা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। বাল্কহেডটি মো. মানিক মৃধা নামে একজনকে ভাড়া দিয়েছিলাম। এটি বালু টানার কাজে ব্যবহার করা হতো। আমাকে না জানিয়ে তারা কয়লা পরিবহন করছিল।’

মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, চলতি বছর মোংলা বন্দর এলাকায় পাঁচটি নৌযান ডুবেছে। এর মধ্যে ২৭ ফেব্রুয়ারি ৭৫০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এমভি বিবি-১১৪৮, ৩০ মার্চ ৫১০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এমভি ইফসিয়া মাহিন, ৮ অক্টোবর ১৪০০ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে এমভি বিউটি অব লোহাগড়া-২, একই দিনে ৮৫২ মেট্রিক টন সার নিয়ে এমভি দেশবন্ধু ও ১৫ নভেম্বর ফারদিন-১ নামের বাল্কহেড ডুবে যায়।

আরও পড়ুন