আ.লীগ কার্যালয়ের আসবাব সরিয়ে নিয়ে তালা দিলেন কাদের মির্জা

কোম্পানীগঞ্জের রূপালী চত্বরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা ডাকা হয়েছে কাল মঙ্গলবার সকালে। কিন্তু আজ সোমবার শহরের রূপালী চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিলেন আবদুল কাদের মির্জা। এর আগে কার্যালয়ের সব আসবাব সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আজ সকাল ১০টায় ইউনিয়ন পরিষদের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাবনা তৈরির বিষয়ে কার্যকরী কমিটির সভা ডাকা হয়েছিল। এই সভা যাতে হতে না পারে, সে জন্য কাদের মির্জা তাঁর অনুসারীদের দিয়ে দলীয় কার্যালয় থেকে আসবাবসহ অন্যান্য সামগ্রী বের করে নিয়ে গেছেন। এ অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানের বাড়ি বসুরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভায় দলীয় কার্যালয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে ২৫-৩০ জন ব্যক্তি কার্যালয়ের ভেতর থেকে চেয়ার, টেবিল, বৈদ্যুতিক পাখাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বের করে নেন। এ সময় আবদুল কাদের মির্জার উপস্থিতি ছিলেন। আসবাবপত্রের কিছু কাদের মির্জার আলেয়া টাওয়ারের তৃতীয় তলায়, কিছু মেয়রের পৌরসভা কার্যালয়ে নিয়ে রাখা হয়। শহরের আলেয়া টাওয়ারে আজই কাদের মির্জা নতুন ব্যক্তিগত কার্যালয় করেন। আসবাব বের করে নেওয়ার পর কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, দলের সভা বানচাল করার জন্য আবদুল কাদের মির্জা দলবল নিয়ে কার্যালয় থেকে আসবাব ও অন্যান্য সামগ্রী তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে গেছেন। অথচ এই আসবাবপত্রগুলো তাঁরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদান নিয়ে কিনেছেন। মিজানুর রহমান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী তালিকা তৈরির জন্য এ সভা আহ্বান করা হয়।

আবদুল কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়ে তাঁর ‘সত্যবচন’ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এ অবস্থায় তাঁরা দলের কোনো সভা করতে পারেন না।
আবদুল কাদের মির্জা, মেয়র, বসুরহাট পৌরসভা

কার্যালয়ে তালা দেওয়ার বিষয়ে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি ভাড়া নিয়ে এই কার্যালয়টি স্থাপন করি। এর আসবাবপত্রও আমার কেনা। এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানের ইন্ধনে ঘরের মালিক কিছুদিন ধরে কার্যালয় ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তাই কার্যালয়টি খালি করে দিয়েছি।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ওই বাড়ির মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াতের চাচা আবদুর রাজ্জাক। একসময় একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কার্যালয় ছিল। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা সেখানে গিয়ে আড্ডা দিতেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কার্যালয়টি বন্ধ হয়ে গেলে সেটি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল। অধিকাংশ সময়ই কার্যালয়ের ভাড়া দিতেন আবদুল কাদের মির্জা।

সভা বানচালের অভিযোগ অস্বীকার করে কাদের মির্জা বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এ অবস্থায় তাঁরা দলের কোনো সভা করতে পারেন না।

যদিও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব পাঠাতে উপজেলা আওয়ামী লীগকে বলা হয়েছে। এটা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক, এটা করতে কোনো বাধা নেই। কাদের মির্জার মতে দল চলবে না। দল দলের গতিতে চলবে।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, বসুরহাট পৌরসভার জিরো পয়েন্টে উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থায়ী কার্যালয় স্থাপনের জন্য চার শতক জায়গা কেনা হয়েছে। সেখানে শিগগিরই নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। তার আগে নতুন আসবাবপত্র কিনে রূপালী চত্বরের পুরোনো কার্যালয়টি আবার ব্যবহার করার চিন্তা করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।