আ.লীগে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী, সুবিধা নিতে চায় বিএনপি

গত ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের মারা গেলে পদটি ফাঁকা হয়।

ওপরে রেজাউল হক , নিচে বা থেকে আফজাল হোসেন ও মো. রইজউদ্দিন

পাবনার বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন ঘিরে বইছে নির্বাচনী আমেজ। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা পুরোদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। এই নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী থাকায় বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে একক প্রার্থীর সুবিধা নিয়ে জয়ী হতে চায় বিএনপি।

এই উপনির্বাচনে প্রার্থী রয়েছেন চারজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত রেজাউল হক, বিএনপির মো. রইজউদ্দিন, জাতীয় পার্টির আলী আহাদ ও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আফজাল হোসেন।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা যান। ৩ নভেম্বর চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী, ১০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৪ নভেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা।

নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী সমানতালে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তিনিও একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন।

২৪ নভেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হয়েছে প্রচারণা। ১০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, এবারের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন কমপক্ষে ১২ জন। তাঁদের মধ্য থেকে দলীয় মনোনয়ন পান উপজেলার জাতসাকিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক। দলীয়
মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফজাল হোসেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে এ নিয়ে তিনি তিনবার আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হলেন। এর আগে তিনি ২০০৯ ও ২০১৯ সালে নির্বাচনে পরাজিত হন।

এদিকে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে ১৪ নভেম্বর দলীয় প্রার্থী রেজাউল হকের গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় রেজাউল হকের অন্তত ১০ জন সমর্থক আহত হন।এ ঘটনায় আফজাল হোসেনসহ কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে।

এ অবস্থায় গত শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আফজাল হোসেনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’র পক্ষে কাজ না করার জন্য বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আফজাল হোসেন দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। এ ছাড়া দলের মূল অংশসহ সাধারণ জনগণও আমার পক্ষে। তাই এ উপনির্বাচনে আমি প্রার্থী হয়েছি।’

আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল হক অসুস্থ থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর ভাই মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘পুরো দল, উপজেলাবাসী আমাদের সঙ্গে আছেন।’

বিএনপির নেতা–কর্মীরা জানান, প্রচারণায় পুলিশ বা সরকারি দল কোনো রকম বাধা দিচ্ছে না। দলীয় প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে বিএনপির প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইজউদ্দিন বলেন, এই উপনির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভোট দেওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। এমন অবস্থা বজায় থাকলে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক ভোটার উপস্থিত হবেন। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে।