আ.লীগের চার ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার

পৌরসভা নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় চার আওয়ামী লীগ নেতাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সাময়িক বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি প্রকাশ করে জেলা আওয়ামী লীগ।

বহিষ্কৃত নেতারা হলেন দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর নেওয়াজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং দেবীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন।

ষষ্ঠ দফায় পৌরসভা নির্বাচনের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো দেবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর নেওয়াজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন রয়েছেন।

অপরদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও দলের দুই নেতা মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাখখারুল আলম এবং পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সরকার ফরিদুল ইসলাম। এ ছাড়া মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন মাসুদ পারভেজ এবং সাংবাদিক (যুগান্তর–এর সহসম্পাদক) জাকারিয়া ইবনে ইউসুফ।

বহিষ্কারের বিষয়ে মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর নেওয়াজ বলেন, ‘বহিষ্কারের কথা শুনেছি, তবে এখনো কোনো চিঠি পাইনি।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ কি আমাকে বহিষ্কার করতে পারে? আমরা তো জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ।’

এদিকে বহিষ্কারের বিষয়ে মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর নেওয়াজ বলেন, ‘বহিষ্কারের কথা শুনেছি, তবে এখনো কোনো চিঠি পাইনি।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ কি আমাকে বহিষ্কার করতে পারে? আমরা তো জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ। আমি দীর্ঘ সাত বছর ধরে পৌরসভার সীমানা জটিলতা নিয়ে মামলা করে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। আওয়ামী লীগ এখানে যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাঁর তো কোনো জনসমর্থন নাই, জনসম্পৃক্ততা নাই। জনগণ আমাকে চায়। আমি শতভাগ আশাবাদী যে আমি মেয়র নির্বাচিত হব।’

অপর ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘বহিষ্কারের চিঠি এখনো পাইনি। তবে জেলার নেতারা দলীয় অফিসে বসে বহিষ্কার করবেন এটা কেমন কথা? আওয়ামী লীগ আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে আমার সঙ্গে বেইমানি করেছে বলে আমি মনে করি। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করেছে। আমি মনে করি বহিষ্কার এখানে কোনো বিষয় নয়, বড় বিষয় হচ্ছে জনগণ। জনগণ আমাকে চায় বলে আমি মনে করি। আমি শতভাগ আশাবাদী যে আমি মেয়র নির্বাচিত হব।’

পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মার্কা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার মার্কা নৌকা এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জের নির্বাচনে যেখানে বিএনপির প্রার্থীও রয়েছে, সেখানে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলের চারজন নেতা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, যা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও গঠনতন্ত্রের চরম পরিপন্থী কাজ। এ জন্যই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী ওই চারজনকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও দেবীডুবা ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে ২০১৪ সালে গঠিত হয় দেবীগঞ্জ পৌরসভা। সীমানা জটিলতায় দীর্ঘদিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার প্রথমবারের মতো এই পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে গত ১১ এপ্রিল ৯টি কেন্দ্রের প্রতিটিতেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের কথা ছিল। পরে করোনা পরিস্থিতির কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত ছিল। দেবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গত ১৮ মার্চ। মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই হয় ১৯ মার্চ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ২৪ মার্চ। পরদিন ২৫ মার্চ প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থগিত হওয়া এই ভোট গ্রহণ ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। দেবীগঞ্জ পৌরসভার মোট ভোটার ১০ হাজার ৯১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ হাজার ৩৩৬ জন এবং নারী ভোটার ৫ হাজার ৫৭৮ জন।