আ.লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপর দুই প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় পাথরঘাটা সদর ইউপির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে অপর দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ওই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে ওই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেওয়া ওই দুই প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ মো. আসাদুজ্জামান (আনারস) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম মতিউর রহমান মোল্লা (ঘোড়া)। তাঁরা ১৪, ১৬ ও ১৮ নভেম্বর লিখিত অভিযোগগুলো করেন।

লিখিত অভিযোগে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান উল্লেখ করেন, ১৪ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে বাদুরতলা বাজারে আমার গণসংযোগ চলাকালে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র রামদা, ছ্যানা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাকেসহ আমার কর্মী–সমর্থকদের ধাওয়া করেন। ওই দিনের পর থেকে রামদা ও ছ্যানা নিয়ে মোটরসাইকেলে বহিরাগতরা মহড়া দিচ্ছে। এতে এলাকায় ভোটাররা আতঙ্কে রয়েছে। এ ছাড়া ১৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিজলাঠিমারা গ্রামে আসাদুজ্জামানের প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত মাইক ভাঙচুর করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা।

পাথরঘাটা সদর ইউপি নির্বাচনে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মতিউর রহমান মোল্লা বলেন, ১৬ নভেম্বর নিজলাঠিমারা গ্রামে মাইকে প্রচারণা করতে গেলে তাঁর কর্মী ধলু মোল্লা ও রনি হোসেনকে বেদম মারধর করে মাইক ও ব্যাটারি ছিনিয়ে নিয়ে যান নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। ১৭ নভেম্বর আমার ছেলে সুমন মোল্লার মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নেন তাঁরা। পরে তাঁরা মোটরসাইকেলটি ফেরত দিলেও তাঁকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে সরে যেতে হুমকি দেন। ১৭ নভেম্বর হরিণঘাটা বাজার থেকে পদ্মা বাজার পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘোড়া প্রতীকের পোস্টার টানানো ছিল। ওই পোস্টার খুলে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘আমি ১৮ নভেম্বর হাতেমপুর গ্রামে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঘোড়া প্রতীকের লিফলেট বিতরণ করছিলাম। এ সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী ছগির হোসেনের নেতৃত্বে একদল লোক আমাকে বাধা দেয়। এ সময় ওই কর্মীরা আমাকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি দেয়।’

এম মতিউর রহমান মোল্লা ও মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, এসব ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আইউব আলী হাওলাদার, পাথরঘাটার ইউএনও হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ ও পাথরঘাটা থানার ওসি মো. আবুল বাশারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

জানতে চাইলে পাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আইউব আলী হাওলাদার বলেন, পাথরঘাটা সদর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী তিনটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাথরঘাটা থানা, পাথরঘাটা ইউএনও, বরগুনা পুলিশ সুপার ও বরগুনা জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

 এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পূর্ণকালীন দায়িত্বে কাজ শুরু করেছেন। পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলে সেগুলোও তাঁরা দেখবেন।’
এ ব্যাপারে বরগুনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রার্থীদের এ ধরনের অভিযোগের খবর আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ হয়ে থাকলে বিষয়টি দ্রুত দেখা হবে।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে এ ইউনিয়নে ইভিএমে ২৮ নভেম্বর ভোট গ্রহণ করা হবে। এ ইউপিতে উল্লিখিত তিন প্রার্থী ছাড়াও চেয়ারম্যান পদে ইসলামী আন্দোলনের মো. হাফিজুর রহমান (হাতপাখা) এবং মো. সুমন মিয়া (চশমা) ও রাশেদুল ইসলাম (মোটরসাইকেল) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।