আশুগঞ্জে গৃহবধূ মর্জিনার ওপর অ্যাসিড হামলায় জড়িতদের শাস্তি দাবি

গৃহবধূ মর্জিনা বেগমের ওপর অ্যাসিড হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন নারীরা। রোববার দুপুর ১২টার দিকে আশুগঞ্জের গোলচত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূ মর্জিনা বেগমের (৩৮) ওপর অ্যাসিড হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন নারীরা। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে আশুগঞ্জের গোলচত্বরে উপজেলার বিভিন্ন নারী সংগঠনের সদস্যরা এই দাবি জানান।

উপজেলার আলমনগর নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভানেত্রী মনোয়ারা বেগমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন অ্যাসিডদগ্ধ মর্জিনা বেগম, উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের আশার আলো নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভানেত্রী জৌসনা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক বিলকিস বেগম, আলমনগর নারী উন্নয়ন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জরিনা বেগম, যাত্রাপুর নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভানেত্রী শিরিনা বেগম, সহসভাপতি রিনা বেগম, তালশহর নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভানেত্রী ইমনি ইসতিয়ান, সাধারণ সম্পাদক রায়হানা বেগম, আড়াইসিধা নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভানেত্রী আম্বিয়া বেগম, সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ আবদুল্লাহ, শরীফপুরের মানুষ মানুষের জন্য নারী সংগঠনের সভানেত্রী শরিফা বেগম, সাধারণ সম্পাদক রিনা বেগম প্রমুখ। বক্তারা মর্জিনার ওপর অ্যাসিড হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।

মর্জিনা বেগম উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের কান্দাপাড়ার মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী। তাঁদের আরমান মিয়া (১৬) নামের এক ছেলে ও জোনাকি আক্তার (১৪) নামের এক মেয়ে আছে। অ্যাসিড হামলার শিকার হয়ে তীব্র যন্ত্রণার জীবন বয়ে বেড়ানোর বিষয়ে মর্জিনা বেগম বলেন, ‘ওপরে তাকাতে পারি না, নিচে তাকালে চোখ, নাক ও ঠোঁট দিয়ে পানি পড়ে। চোখের পাতাও বন্ধ করতে পারি না। অসহ্য যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। চোখেও ঝাপসা দেখি। তারা ঘরে ঢুকে কাপড় খুলে আমার মুখ ও শরীরে অ্যাসিড ঢেলে দেয়। এ পর্যন্ত পাঁচবার অপারেশন করেছি। আর প্রতিপক্ষের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে বাবার বাড়িতে থাকছি।’

চলতি বছরের ৩ এপ্রিল গভীর রাতে অ্যাসিড হামলার শিকার হন মর্জিনা বেগম। এ ঘটনায় করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, ওই দিন বিকেলে কান্দাপাড়া এলাকায় ইরিধানের জমিতে পানি দেওয়া নিয়ে ভাতিজা লিটন মিয়ার (২৫) সঙ্গে মর্জিনার স্বামী মোহাম্মদ আলীর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তখন মোহাম্মদের পরিবারকে অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেন লিটন। পরে রাত দুইটার দিকে লিটন, চাচাতো ভাই দুলাল মিয়া (৪৮), জয়নাল মিয়া (৪০), বিল্লাল মিয়া (৫০) ও চাচা জাকির মিয়া (৫০) অ্যাসিডের বোতল নিয়ে মোহাম্মদের বসতঘরে ঢুকে মর্জিনার ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করেন। এতে মর্জিনার পুরো মুখমণ্ডল, কপাল, দুই কান, দুই চোখ, বাঁ কাঁধ, বুক, তলপেট, দুই হাতের কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত ও দুই ঊরুর অংশ ঝলসে গেছে। তাঁর শরীরের প্রায় ২৪ শতাংশ ঝলসে গেছে। মর্জিনা চিৎকার শুরু করলে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানা-পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে ৪ মে মর্জিনার স্বামী মোহাম্মদ আলী ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি বিচারিক তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আনোয়ার সাদাতকে নির্দেশ দেন। মাসখানেক আগে তদন্তের জন্য আনোয়ার সাদাত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মর্জিনার জবানবন্দি নিয়েছেন। অ্যাসিড হামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাবি, মর্জিনার স্বামীই এই অ্যাসিড নিক্ষেপ করেছেন।