আশুগঞ্জে স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জ উপজেলায় স্ত্রী কামরুন নাহার তুর্ণা হত্যা মামলায় পলাতক স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ সফিউল আজম এ দণ্ডাদেশ দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম আরিফুল হক রনি। তিনি আশুগঞ্জ উপজেলার আমিরুল হকের ছেলে। প্রায় এক বছর ধরে তিনি পলাতক। কামরুন নাহার উপজেলার চরচারতলা গ্রামের মফিজুল হকের একমাত্র মেয়ে।

মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর কামরুন নাহারের বাবা মফিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আপস না করায় আসামিপক্ষের লোকজন তাঁকে একাধিকবার মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। একমাত্র মেয়ে হত্যা মামলায় আদালতের রায়ে এখন তিনি খুশি। এ জন্য বিচারক, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ দেন। সেই সঙ্গে দ্রুত রায় কার্যকর দাবি জানান তিনি।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালে পারিবারিকভাবে আরিফুল হকের সঙ্গে কামরুন নাহারের বিয়ে হয়। তাঁদের তাছমিয়া হক নামে সাড় পাঁচ বছরের একটি কন্যাসন্তান আছে। ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে শ্বাসরোধ করে কামরুন নাহারকে হত্যা করে তাঁর লাশ বাড়ির পরিত্যক্ত ট্যাংকে রেখে দেন আরিফুল হক। ২৪ এপ্রিল সকালে পানির ট্যাংক থেকে মুখে পলিথিন মোড়ানো ও হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা কামরুন নাহারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর থেকেই তাঁর স্বামী আরিফুল হক পলাতক ছিলেন। হত্যার ঘটনায় মফিজুল বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল আশুগঞ্জ থানায় কামরুন নাহারের স্বামী আরিফুলকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

মামলার নথি ঘেঁটে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২১ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারিক হাকিম তৃতীয় আদালতে আরিফকুল আত্মসমর্পণ করেন। বিচারিক হাকিম আয়েশা বেগম আরিফুলকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ১ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের দ্বিতীয় আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। বিচারিক হাকিম ফারজানা আহমেদ তাঁর জবানবন্দি নেন। জবানবন্দিতে রাতে ঘুমের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে কামরুন নাহারকে হত্যার কথা স্বীকার করেন আরিফুল। পরে মুখে পলিথিন মুড়িয়ে হাত-পা বেঁধে লাশ বাড়ির পরিত্যক্ত ট্যাংকে ফেলে দেন। ২০১৭ সালে ৯ সেপ্টেম্বর আরিফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম তালুকদার । ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল আরিফুল আদালতে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন এবং বিচার প্রার্থনা করেন। ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েই ফের পলাতক হন আরিফুল।

মফিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছোট ভাইয়ের ছেলে আরিফুল হকের সঙ্গে মেয়ে কামরুন নাহারের বিয়ে হয়। ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন নাহার। কিন্তু আরিফুল হক এসএসসি পাস করেননি। সম্পর্কে তাঁরা চাচাতো ভাইবোন। বিয়ের পর ২০১৬ সালে আরিফুলের মুঠোফোনে একটি আপত্তিকর ছবি নিয়ে কামরুন নাহারের ঝগড়া হয়। পরে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানও করা হয়। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ঝগড়া চলতে থাকে। সেই ঝগড়ার জের ধরেই তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।