আশুলিয়ায় নদী দখল করে বালুর ব্যবসা

আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাসহ কিছু প্রভাবশালী অবৈধভাবে এসব বালুর গদি বসিয়ে ব্যবসা করছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

ঢাকার আশুলিয়ায় বংশী নদীর তীর এভাবে বালু স্তূপ করে রেখে বিক্রি করা হচ্ছে
প্রথম আলো

ঢাকার আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকায় বংশী নদী ও নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এবার ওই নদীতে বালু ফেলে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় অর্ধশত বালুর গদি। সেখানে চলছে বালুর ব্যবসা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ কিছু প্রভাবশালী অবৈধভাবে এসব বালুর গদি বসিয়ে ব্যবসা করছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নয়ারহাট উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বংশী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর পূর্ব পারে আশুলিয়ার নয়ারহাট আর পশ্চিম পারে ধামরাইয়ের ইসলামপুর। এই দুই পারেই সেতুর আশপাশে সওজের জমির ওপর শতাধিক বালুর গদি ছিল। স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন অবৈধভাবে গদি বসিয়ে বালুর ব্যবসা করছিলেন। বছর দেড়েক আগে এসব গদি উচ্ছেদ করে ইসলামপুর অংশের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়। নয়ারহাট অংশে সেতুর নিচ দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক নির্মাণ করা হলেও সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়নি। এই সুযোগে কিছু ব্যক্তি সওজের জমিসহ নদী দখল করে বালুর গদি বসিয়ে ব্যবসা করছেন। নোটিশ দেওয়ার পরও দখলদারেরা গদি সরিয়ে নিচ্ছেন না।

বংশী নদীর তীর দখল করে স্তূপ রাখা বালু বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রথম আলো
স্থানীয় কিছু ব্যক্তি সওজের জমিসহ নদীর তীরে অবৈধভাবে গদি বসিয়ে বালুর ব্যবসা করছেন। গদি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে তাঁদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নজরুল ইসলাম, সওজের নয়ারহাট উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে সাভার থেকে ধামরাই যাওয়ার পথে নয়ারহাট সেতুর ওপর উঠে উত্তর ও দক্ষিণ পাশে তাকাতেই চোখে পড়ে সারি সারি বালুর গদি। সেতুর দক্ষিণ পাশে রয়েছে ৩টি আর উত্তর পাশে ২২টি গদি। নদীতে বালুর বস্তা ফেলে গড়ে তোলা হয়েছে এসব গদি। এখান থেকেই বালু বিক্রির পর তা ট্রাকে করে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রলার ও বলগেটে করে বালু এনে ড্রেজারের সাহায্যে তা গদিতে ফেলা হয়। এর ফলে নদী ভরাট হয়ে ক্রমেই সরু হয়ে আসছে।

সেতুর দক্ষিণ পাশে তিনটি বালুর গদি পরিচালনা করেন রাসেল নামের এক ব্যক্তি। রাসেল বলেন, গদি তিনটি আগে পরিচালনা করতেন স্থানীয় পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ভাগনে হাসু ও হাবিব এবং নূরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। এসব গদির প্রতিটির জন্য তাঁকে মাসে ৩০–৩৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়।

সেতুর উত্তর পাশে প্রথম বালুর গদি (সেতুসংলগ্ন) পরিচালনা করেন ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমানসহ আরও কয়েকজন। তিনি বলেন, নয়ারহাট এলাকায় বংশী নদী ও নদীর তীরে ২৩টির মতো বালুর গদি আছে। এসব গদিতে শতাধিক লোক বালুর ব্যবসা করে থাকেন, যাঁদের অধিকাংশই আশুলিয়া-ধামরাইয়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যবসা করতে না পেরে অনেকটা নিরুপায় হয়েই তাঁরা বালুর ব্যবসায় নেমেছেন। এতে কয়েক শ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

নদী ও নদীর তীরে বালুর গদি স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারি কোনো অনুমতি আছে কি না, জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী ফরহাদ বলেন, এর কোনো অনুমতি দরকার হয় কি না, তা তাঁর জানা নেই।

নয়ারহাট বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতিদিন কয়েক শ বালুর ট্রাক চলাচলের কারণে তাঁদের বাজারে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে সমস্যা হয়। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্থানীয় পাথালিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান বলেন, যাঁরা বালুর ব্যবসা করেন, তাঁদের অনেকেই সরকারি দলের নেতা-কর্মী। কিন্তু তাঁরা নদী দখলের উদ্দেশ্যে নয়, ব্যবসার উদ্দেশ্যে নদীর তীরে বালু স্তূপ করে রেখে বিক্রি করেন। ফোন বন্ধ থাকায় একাধিকবার চেষ্টা করেও মোয়জ্জেম হোসেনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সওজের নয়ারহাট উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি সওজের জমিসহ নদীর তীরে অবৈধভাবে গদি বসিয়ে বালুর ব্যবসা করছেন। গদি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে তাঁদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।