‘আশ্রয় পাইছি, কিন্তু পেট চলব কিলা’
সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গাল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তৃতীয় তলার বারান্দায় বসে আছেন দৌলত আলী (৫৫)। বিদ্যালয়টি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার পর আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে এসেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে নগরের মাছুদীঘির পাড় এলাকার আরও ছয়টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।
দৌলত আলী জানান, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তাঁর ঘরে হাঁটুর নিচে পানি ছিল। সকালে সেখানে কোমরসমান পানি হয়ে যায়। এরপর আর ঘরে অবস্থান করতে পারেননি। প্রতিবেশী ছয়টি পরিবারসহ তিনি ওই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
শ্রমিকের কাজ করে দিন চলে দৌলত আলীর। তাঁর মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায়। সিলেটে আছেন প্রায় ১২ বছর ধরে। যা আয়রোজগার করেন, তা দিয়েই চলে সংসার। কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে আয় নেই।
দৌলত আলী বলেন, ‘সংসার চালানোর মতো অবস্থা এখন নেই। এমন অবস্থায় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। পরিবার নিরাপদ হইছে। কিন্তু কিন্তু পেট চলব কিলা?’ তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতেও ঘরে পানি প্রবেশ করায় শুকনা খাবার কিনে খেয়েছেন, রান্না করা হয়নি। শুক্রবার বেলা ১১টা বেজে গেছে, কিন্তু এখনো পেটে কিছু পড়েনি।
একই কথা জানালেন আশ্রয়কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আশ্রয় নেওয়া ফয়েজ উদ্দিন (৪৫)। তিনি বলেন, আশ্রয় পেয়েছেন, কিন্তু খাওয়ারদাওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। এরপরও আশ্রয় পেয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি হয়েছে। পরিবারে স্ত্রী এবং দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ ছয় সদস্য। রাতে খিচুরি রান্না করে খেয়েছেন, সকালে কিছুই খাননি। দুপুর গড়িয়ে এসেছে, এখন খাবারের ব্যবস্থা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরের অভ্যন্তরে বন্যাদুর্গতদের আশ্রয়ের জন্য ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বৃহস্পতিবার থেকে মানুষ উঠছে। শুক্রবার সেটি দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ যেতে পারছে না। এ জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে কতজন আশ্রয় নিয়েছে, এর কোনো সঠিক হিসাব নেই। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা যায়নি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল আলিম শাহ বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ উঠছে। সেটি অব্যাহত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের খাবার সরবরাহের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আবদুল আলিম শাহ বলেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে অবস্থান করছে। সেখানে পানি বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যরা বলেছিলেন, আরও পানি বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সেখানে পানিনিষ্কাশন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে।