আসামি হাজির করতে না পারায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি

অনন্ত বিজয় দাশ (৩২)
প্রথম আলো

সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু আসামিদের আদালতে হাজির না করায় বুধবার সিলেটে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।

সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আজ নির্ধারিত তারিখ ছিল। আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলায় সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সাক্ষী হিসেবে সিলেটের মদনমোহন কলেজের প্রভাষক আবুল কাশেম আদালতে  হাজির হন। কিন্তু মামলার আসামিদের আদালতে হাজির না করায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। এ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত দুজন আসামি কারাবন্দী। এর মধ্যে সফিউর রহমান ফারাবী কাশিমপুর কারাগারে থাকায় তাঁকে সিলেট আদালতে হাজির করা হয়নি বলে আদালত পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেন, আদালত আসামিদের হাজির থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করবেন বলে জানিয়েছেন।  
ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মজিদ খান বলেন, এ মামলায় মোট ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীসহ ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি আছে।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নূরানী আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্তরা হচ্ছেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জানান, গত বছরের ৭ মে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বারবার পেছানো হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলার পর সম্প্রতি মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।