আসামিদের বাঁচাতে বয়স কমিয়ে দোষীপত্র দেওয়ার অভিযোগ

স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে পুলিশ তাঁদের বয়স কমিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ময়মনসিংহে একটি গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির মামলায় দুজন আসামিকে শাস্তি থেকে বাঁচাতে বয়স কমিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে দোষীপত্র দেওয়ার অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে পুলিশ তাঁদের বয়স কমিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন।

মামলার বাদী প্রথম আলোকে জানান, ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে তাঁর কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করেন স্থানীয় পাঁচ যুবক। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখান। এ০তে কিশোরী বিষয়টি গোপন করে। কিন্তু কিছু দিন পর ওই যুবকেরা সে ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ করেন। পরে গত বছরের ৩ মার্চ কিশোরীর বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৪ এ ঘটনায় রিপন, লিয়ন ওরফে লাবিব, আশিক, খোকন ও ছমিন নামের পাঁচজনকে আটক করে। তাঁদের আটকের পর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন কিশোরীর বাবা। মামলার আসামিদের মধ্যে রিপন ছাড়া বাকি চারজন জামিনে আছে।

কিশোরীর বাবার অভিযোগ, গ্রামের একটি প্রভাবশালী মহল এ মামলার আসামিদের বাঁচাতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আসামি লিয়ন ও আশিকের বয়স কমিয়ে আদালতে অপ্রাপ্ত বয়সী বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। আটকের পর র‌্যাব লিয়ন ও আশিকের বয়স ২০ বছর করে উল্লেখ করে। মামলায়ও এ দুজনের বয়স ২০ উল্লেখ করা হয়। তবে পুলিশের তদন্তের পর আদালতে এ দুই আসামি অপ্রাপ্ত বয়স উল্লেখ করে আদালতে তাঁদের নামে অভিযোগপত্র না দিয়ে দোষীপত্র দেওয়া হয়। এ ছাড়া আসামি ছমিনের বয়স ১৭ বছর হওয়ায় তার নামেও দোষীপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি দুই আসামি খোকন ও রিপন প্রাপ্ত বসয়ী হওয়ায় তাঁদের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

বিভিন্ন মাধ্যমে তদন্ত করে লিয়ন ও আশিক নামের দুই আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে প্রমাণ পাওয়ায় তাদের নামে আদালতে দোষীপত্র দেওয়া হয়।
ফারুক হোসেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা

এ ছাড়া আসামি লিয়ন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কুষ্টিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী বলে প্রত্যায়ন পত্র দিয়েছেন কুষ্টিয়া ইউনিয়ন আওয়াম লীগের সভাপতি ও কুষ্টিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম শামসুল হক। ওই প্রত্যায়নপত্রে লিয়ন রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী কোনো কাজে যুক্ত নন বলে প্রত্যায়ন করা হয়েছে। বাদীর অভিযোগ মামলা আসামিকে বাঁচাতে এমন প্রত্যায়ন দেওয়া হয়েছে।

শামসুল হক বলেন, ‘লিয়নের বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তিনি আমার কাছে ছেলের বিষয়ে প্রত্যায়নপত্র চাইলে আমি দিয়ে দেই। তবে সেটি মামলা থেকে বাঁচাতে ব্যবহার করবেন, এমন তথ্য আমার জানা ছিল না।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে তদন্ত করে লিয়ন ও আশিক নামের দুই আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে প্রমাণ পাওয়ায় তাদের নামে আদালতে দোষীপত্র দেওয়া হয়। অপ্রাপ্ত বয়সী আসামিদের বয়স নিয়ে মামলার বাদীর কোনো আপত্তি থাকলে সেটি আদালতে জানাতে হবে। আদালত বাদীর অভিযোগ গ্রহণ করে আবারও বয়স যাচাই করার নির্দেশ দিতে পারেন।