আহত ব্যক্তি মারা গেলেন হাসপাতালে, গ্রামে হামলায় আরেকজন নিহত

লাশ
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রসুলপুরে পূর্ববিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হওয়ার দুই মাস পর বাছির মিয়া নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নিহতের পক্ষের লোকজনের হামলায় অপর পক্ষের আরেকজন নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নিহত দুজন হলেন উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আবদুল মন্নাফের ছেলে ফারুক মিয়া (৫৫) ও একই গ্রামের মৃত আজম মুন্সীর ছেলে বাছির মিয়া (৫৯)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাছির মিয়া মারা যান বুধবার সন্ধ্যায়। একই হাসপাতালে রাতে মারা যান ফারুক মিয়া। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে তাঁদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রসুলপুর গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য সহিদ মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের বাছির মিয়ার ভাই সাবেক ইউপি সদস্য সোবহান মিয়ার বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে গত বছরের ১৩ নভেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে কাজে যাওয়ার সময় বাছির মিয়ার ওপর সহিদ মিয়ার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের লোকজন তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকায় চিকিৎসা শেষে পরিবারের লোকজন ১৫ জানুয়ারি বাছিরকে আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। গত বুধবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাছিরের মৃত্যু হয়। বাছির দীর্ঘ দুই মাস আট দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এদিকে বাছিরের মৃত্যুর সংবাদ রসুলপুর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে সাবেক ইউপি সদস্য সোবহান মিয়ার লোকজন ইউপি সদস্য সহিদ মিয়ার লোকজনের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা সহিদ মিয়ার পক্ষের ফারুক মিয়াকে একা পেয়ে মারধর করেন। রাতেই স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে ফারুককে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নিহত ফারুক মিয়ার চাচা ইউপি সদস্য সহিদ মিয়া বলেন, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাছির মিয়া মারা গেলে তাঁদের পক্ষের লোকজন সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সহিদদের ওপর হামলা চালান। এ সময় সহিদের ভাতিজা ফারুক গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

নিহত বাছিরের চাচাতো ভাই সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল সোবহান বলেন, তিনি দুইবার ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন। একবার জয়ী হয়েছেন। পরের বার সহিদ মিয়া জয়ী হয়েছেন। কেন সহিদ নির্বাচন করেন, এটা নিয়েই মূল বিরোধ। সহিদসহ তাঁর লোকজন দুই-আড়াই মাস আগে গ্রামের মাঠে ফেলে বাছির মিয়াকে কুপিয়ে আহত করেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় বাছির মারা যান। বাছিরের মৃত্যুর পর প্রতিপক্ষ সহিদ মিয়ার পক্ষের লোকজনের ওপর হামলার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, মারধরের শিকার হয়ে বাছির দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিল। গত বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাছির মারা যান। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ফারুকের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রসুলপুরে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।