আড়াই কিলোমিটার বেহাল

ভাঙনের কারণে ১২ ফুটের সড়ক কোথাও কোথাও এখন ২-৩ ফুট চওড়া। কোথাও বিশাল গর্ত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-অরুয়াইল সড়কের আড়াই কিলোমিটার অংশ বেহাল। হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে অটোরিকশা। গত বুধবার চুন্টা ইউনিয়নের লোপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-অরুয়াইল সড়কের দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার। এ সড়কের মাঝখানের আড়াই কিলোমিটার অংশ বেহাল। ওই অংশটুকু সংস্কার না করায় দুই বছর ধরে এ সড়ক দিয়ে শুধু রিকশা, মোটরসাইকেল আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। বেহাল সড়কের কারণে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে, ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, উপজেলার উত্তর প্রান্তে হাওর এলাকায় ১১ বছর আগে উদ্বোধন করা হয় সড়কটি। উপজেলা সদরের হাসপাতাল মোড় থেকে অরুয়াইল বাজার পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার আর প্রস্থ ১২ ফুট। এটি উপজেলার চুন্টা, পাকশিমুল ও অরুয়াইল ইউনিয়ন এবং নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ও কুন্ডা ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের পথ। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার অনেক লোক অল্প সময়ে এই সড়ক দিয়ে কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে।

দুই বছর আগে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের সংস্কার করা হয়। বাকি রয়েছে চুন্টা ইউনিয়নের ঘাগড়াজোর সেতু থেকে পাকশিমুল ইউনিয়নের ভূঈশ্বরবাজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার অংশ। এ অংশটি পুরোপুরি হাওরের মধ্যে পড়েছে। প্রতিবছর বর্ষার ভাঙনে পড়ে ওই অংশটুকুর অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। অথচ পাঁচ বছর ধরে এ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দুই বছর ধরে যানবাহন চলাচলও সীমিত হয়ে গেছে।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় ধুলায় ভরে গেছে সড়কটির ওই আড়াই কিলোমিটার। পিচঢালাইয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। ক্রমাগত ভাঙনের কারণে ১২ ফুটের সড়ক কোথাও কোথাও এখন ২-৩ ফুট চওড়া। কোনো কোনো স্থানে দুটি রিকশাও একসঙ্গে পাশ কাটাতে পারে না। কোথাও বিশাল গর্ত।

স্থানীয় লোকজন বলেন, বৃষ্টি হলে সড়কের এ অংশটি চষা জমিতে পরিণত হয়। আর রোদ পড়লে ধুলাবালুতে ভরে যায়। এখানে চলাচলের সময় দুর্ভোগের পাশাপাশি আতঙ্কে থাকেন তাঁরা। অনেক জায়গায় তাঁদের যানবাহন থেকে নেমে ভাঙা অংশ পার হতে হয়। এদিকে সড়কের শেষ প্রান্তে উপজেলার সবচেয়ে বড় অরুয়াইল বাজার। কয়েক বছর ধরে পণ্যবাহী ছোট-বড় কোনো যানবাহন ওই বাজারে ঢুকতে পারছে না।

অটোরিকশাচালক আতিকুর রহমান বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়া এইখানে যাতায়াত করি। এ ছাড়া কিছুদিন ফর ফর গাড়ি নষ্ট হইয়া যায়।’

যাত্রী রাজিয়া খাতুন বলেন, তাঁর সন্তানের বয়স দেড় বছর। সে পাঁচ দিন ধরে অসুস্থ। রাস্তার ঝামেলার কথা ভেবে এত দিন হাসপাতালে যাননি। এখন বাধ্য হয়ে সদরে রওনা দিয়েছেন।

অরুয়াইল বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব বলেন, অরুয়াইল বাজারটি উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। কিন্তু সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ায় পণ্যবাহী যানবাহন এখানে সরাসরি আসতে পারছে না। এতে ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতি হচ্ছে।

এলজিইডির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, সড়কটির মাঝখানের আড়াই কিলোমিটার অংশের সংস্কারকাজের জন্য ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শিগগির ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।