আয়শা খানম স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন

আয়শা খানম স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন। রোববার সন্ধ্যায় নেত্রকোনা শহরের ছোটবাজার এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে
সংগৃহীত

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ও নারীনেত্রী সদ্য প্রয়াত আয়শা খানম স্মরণে তাঁর নিজ জেলা নেত্রকোনায় প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। রোববার সন্ধ্যায় শহরের ছোট বাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের পক্ষ থেকে এই আয়োজন করা হয়। এতে শহরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন।

আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কবি সাইফুল্লাহ এমরানের পরিচালনায় শুরুতে ‘তুমি কি কেবলই ছবি’ শিরোনামে গান পরিবেশন করেন জেলা উদীচীর সহসভাপতি নারায়ণ কর্মকার। ‘ওই মহামানব আসে’ নামে গান পরিবেশন করেন সাধারণ সম্পাদক অসীত কুমার ঘোষ। পরে আয়শা খানমের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেলন হক, উদীচীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাহেজা বেগম, সিপিবি নেত্রী কোহিনুর বেগম, ছড়াকার সঞ্জয় সরকার, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সহসম্পাদক মো. আলমগীর, প্রথম আলোর প্রতিনিধি পল্লব চক্রবর্তী, আয়শা খানমের ছোট বোন স্কুলশিক্ষক বাঁধন খান, নারী প্রগতির ব্যবস্থাপক মৃণাল চক্রবর্তী, কলেজশিক্ষক পূরবী সম্মানীত, হারাধন সাহা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আয়শা খানম এ দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের এক ‘বাতিঘর’। তিনি জীবনভর মানবমুক্তির গান গেয়ে গেছেন। প্রগতিশীল নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি পথপ্রদর্শক। ছাত্র আন্দোলন দিয়ে তাঁর জীবন শুরু হয়েছে। আর সমাপ্তি ঘটেছে সমাজের অধিকারহীন, বঞ্চিত নারীদের মানবাধিকার আদায়ের লড়াইয়ে। স্বাধীনতা-উত্তর দেশে নারী আন্দোলনকে একটি সামাজিক আন্দোলনে বিকশিত করার ক্ষেত্রে আয়শা খানমের ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আয়শা খানম ৭৪ বছর বয়সে শনিবার ভোরে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। পরে নেত্রকোনা শহরের কাটলী এলাকায় অন্বেষা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও জানাজা শেষে স্বামীর কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

আয়শা খানমের জন্ম নেত্রকোনা সদর উপজেলার কালীয়ারার গাবড়াগাতি এলাকায় ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি আয়েশা খানম বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। পাকিস্তান আমলে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আয়শা খানম রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করতে নামেন তিনি। ‘ডামি’ রাইফেল হাতে ঢাকায় নারী শিক্ষার্থীদের মিছিলের যে ছবি আলোচিত হয়, তাতে আয়েশা খানমও ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজেকে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত করেন আয়শা। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসন ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় কাজও করেন তিনি।