ভোটের আগেই বিজয়ী বাগেরহাটের ৩৯ ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী

বাগেরহাট জেলার মানচিত্র

বাগেরহাট জেলার ৯ উপজেলার ৭৫টি ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) মধ্যে প্রথম ধাপে ৭০ ইউপিতে নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ৩৯ ইউনিয়ন পরিষদে ভোটের আগেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত জেলার ৩৯ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার স্ব স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ইউপিতে একক প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন। বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২৯টি ইউপি সদস্যপদ (ওয়ার্ড মেম্বার) ও ৫টি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে কোনো প্রার্থী না থাকায় একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে কচুয়া উপজেলার রাঢ়ীপাড়া ইউপিতে চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যের ১৩টি পদের সব কটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। ফলে ওই ইউনিয়নে আর ভোটই হচ্ছে না।

কচুয়া উপজেলার রাঢ়ীপাড়া ইউপিতে চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যের ১৩টি পদের সব কটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। ফলে ওই ইউনিয়নে আর ভোটই হচ্ছে না।

চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মোংলা ও মোল্লাহাট উপজেলার সব কটি ইউপির আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তাঁরা হলেন মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা ইউপিতে নাসরিন আক্তার নাজিনা, বুড়িরডাঙ্গা ইউপিতে উদয় শংকর বিশ্বাস, চিলা ইউপিতে গাজী আকবর হোসেন, চাঁদপাই ইউপিতে মোল্লা মো. তরিকুল ইসলাম, সুন্দরবন ইউপিতে মো. একরাম ইজারাদার ও মিঠাখালী ইউপিতে উৎপল কুমার মণ্ডল এবং মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ইউপিতে এস কে হায়দার মামুন, চুনখোলা ইউপিতে মনোরঞ্জন পাল, কুলিয়া ইউপিতে মো. মিজানুর রহমান, গাওলা ইউপিতে শেখ রেজাউল কবীর, কোদালীয়া ইউপিতে শেখ রফিকুল ইসলাম ও আটজুড়ি ইউপিতে মো. মনিরুজ্জামান মিয়া।

বাগেরহাট সদর উপজেলার ১০ ইউপির মধ্যে প্রথম ধাপে নির্বাচন হচ্ছে ৭টিতে। এর ৬টিতেই চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ীরা হলেন বেমরতা ইউপিতে মনোয়ার হোসেন টগর, কাড়াপাড়া ইউপিতে শেখ মহিতুর রহমান পল্টন, বিষ্ণুপুর ইউপিতে মো. মাসুদ রানা, বারুইপাড়া ইউপিতে হায়দার আলী মোড়ল, খানপুর ইউপিতে ফকির ফহম উদ্দিন ও ডেমা ইউপিতে মো. মনি মল্লিক।

শরণখোলা উপজেলার ৪টি ইউপির মধ্যে সাউথখালী ইউপিতে মো. মোজাম্মেল হেসেন, রায়েন্দা ইউপিতে আজমল হোসেন মুক্তা এবং খোন্তাকাটা ইউপিতে জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

রামপাল উপজেলার ১০ ইউপির মধ্যে মল্লিকের বেড় ইউপিতে মো. সাবির আহমেদ তালুকদার, হুড়কা ইউপিতে তপন কুমার গোলদার, ভোজপাতিয়া ইউপিতে তরফদার মাহফুজুল হক টুকু, রামপাল সদর ইউপিতে মো. নাসির উদ্দিন হাওলাদার এবং বাঁশতলী ইউপিতে মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল—এই পাঁচজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।

সবচেয়ে কমসংখ্যক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা মোরেলগঞ্জে। সেখানে ১৬টি ইউপির মধ্যে কেবল নিশানবাড়িয়া ইউপির সাইফুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।

চিতলমারী উপজেলার ৭ ইউপির মধ্যে হিজলা ইউপিতে কাজী আবু শাহিন, শিবপুর ইউপিতে ওয়ালিউজ্জামান জুয়েল, চর বানিয়ারী ইউপিতে অর্চনা রানী ঝরনা বড়াল এবং সন্তোষপুর ইউপিতে বিউটি আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

ফকিরহাট ও কচুয়া উপজেলার ৭ ইউপির চারটিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ফকিরহাট উপজেলার ফকিরহাট সদর ইউপিতে শিরিনা আক্তার কিসলু, বেতাগা ইউপিতে ইউনুচ আলী, পিলজং ইউপিতে মোড়ল জাহিদুল ইসলাম, নলদা-মৌভোগ ইউপিতে সরদার আমিনুর রশিদ এবং কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউপিতে নকীব ফয়সাল অহিদ, গোপালপুর ইউপিতে এস এম আবু বক্কর সিদ্দিক, গজালিয়া ইউপিতে এস এম নাসির উদ্দিন এবং রাঢ়ীপাড়া ইউপিতে নাজমা আক্তার।

নিয়ম অনুযায়ী যাচাইবাছাই ও প্রত্যাহারের পর কোনো পদে একক প্রার্থী থাকলে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করতে হয়। সেই অনুযায়ী বুধবার শেষ দিনে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর রয়ে যাওয়া একক প্রার্থীদের বৃহস্পতিবার গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ, বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা

সবচেয়ে কমসংখ্যক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা মোরেলগঞ্জে। সেখানে ১৬টি ইউপির মধ্যে কেবল নিশানবাড়িয়া ইউপির সাইফুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।

চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই ৩৯ জনের সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলে নিশ্চিত করেছে নির্বাচন অফিস। সবশেষ ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনেও জেলার দুই উপজেলার সব ইউপিসহ মোট ৩২ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ বলেন, প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের ৭০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে একক প্রার্থী থাকায় ৩৯ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৫টি সংরক্ষিত ও ২৯টি সাধারণ সদস্যপদে একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী যাচাইবাছাই ও প্রত্যাহারের পর কোনো পদে একক প্রার্থী থাকলে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করতে হয়। সেই অনুযায়ী বুধবার শেষ দিনে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর রয়ে যাওয়া একক প্রার্থীদের বৃহস্পতিবার গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।