ইউপির কার্যক্রম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, গাইনি চিকিৎসা ব্যাহত

স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে প্রতি মাসে গড়ে ১৫-১৬টি এবং বছরে গড়ে ১৮০-১৯০টি স্বাভাবিক প্রসব হয়।

চাঁদপুর জেলার মানচিত্র

একটি কক্ষে দুজন প্রসূতি মাকে স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী। পাশের কক্ষটিতে চলছে এক অন্তঃসত্ত্বার স্বাভাবিক প্রসব। প্রসব কক্ষটির বিপরীত পাশের দুটি কক্ষে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তথ্য ও সেবা বিভাগের কাজ।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এই দৃশ্য দেখা যায় চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে। উপজেলার পয়ালী গ্রামে অবস্থিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুটি কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ইউপির দাপ্তরিক কার্যক্রম। ওই ইউপির নির্ধারিত ও স্থায়ী কার্যালয় না থাকায় এ সমস্যা হয়েছে বলে দাবি চেয়ারম্যানের।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটির পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) খালেদা আক্তার বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দোতলায় তাঁদের আবাসিক বাসা। নিচের আট কক্ষের দুটিতে ২০১০ সাল থেকে চলছে ওই ইউপির দাপ্তরিক কাজ। বাকি ছয় কক্ষের একটি কৈশোরবান্ধব কর্নার, একটি অস্ত্রোপচার কক্ষ (ওটি), একটি স্টোররুম ও একটি প্রসব-পরবর্তী কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া একটি কক্ষে তিনি ও অপর একটিতে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক বসেন।

এনো আইসা দেখি, অনেক লোকের ভিড় ও হইচই। লোকজন ঠেলে কোনো রকমে ভেতরে ঢুকি। মানুষের বাঁকা চাউনি ও নানা মন্তব্যে অস্বস্তি বোধ করি।
তানজিনা আক্তার, গৃহিণী

খালেদা আক্তার বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে প্রতি মাসে গড়ে ১৫-১৬টি এবং বছরে গড়ে ১৮০-১৯০টি স্বাভাবিক প্রসব হয়। উপজেলার নারায়ণপুর, মালাপাড়া, গাবুয়া, চিরায়ু, মণিগাঁও, হরিদাসপাড়া, কালিকাপুর, বদরপুর, নাটশাল ও দৌলতপুরসহ আশপাশের ৪০টি গ্রামের মায়েরা এখানে প্রসবসেবা নিচ্ছেন। ২০১৩ সাল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনি একাই ১ হাজার ১৭০টি স্বাভাবিক প্রসব করিয়েছেন।

এই স্বাস্থ্যকর্মী অভিযোগ করেন, প্রসব কক্ষটির পাশের দুটি কক্ষে ইউপির কাজ চলায় স্বাভাবিক প্রসবসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। ইউপির উদ্যোক্তা (ইউডিসি) সেখানে কাজ করছেন। তাঁর কাছে আসা লোকজনের হইচই শব্দে প্রসূতি মায়েদের ভোগান্তি-অস্বস্তি বাড়ে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে গত ২৪ নভেম্বর স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেন উপজেলার গাবুয়া গ্রামের গৃহিণী তানজিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এনো আইসা দেখি, অনেক লোকের ভিড় ও হইচই। লোকজন ঠেলে কোনো রকমে ভেতরে ঢুকি। মানুষের বাঁকা চাউনি ও নানা মন্তব্যে অস্বস্তি বোধ করি। তবু হেনোই আমাগো স্বাভাবিক প্রসব অয়। আশপাশে অনেক পুরুষ থাকায় প্রসবের আগে লজ্জায় ভালা কইরা চিৎকারও দিতে পারি নাই। এইডা মায়েদের প্রতি অন্যায়।’

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আ তা ম বোরহান উদ্দিন বলেন, তাঁর দপ্তরের আওতাভুক্ত ওই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র থেকে ইউপির কার্যক্রম সরাতে একাধিকবার ওই ইউপির চেয়ারম্যানকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এরপরও ইউপির কার্যক্রম সরেনি।

নারায়ণপুর ইউপির চেয়ারম্যান জহিরুল মোস্তফা তালুকদার বলেন, তাঁর ইউপির কার্যালয়ের ভবনের ছাদ ভেঙে গেছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গাও পাচ্ছেন না। ব্যক্তিগত বাসায় তিনি তাঁর ইউপির কিছু কার্যক্রম চালাচ্ছেন। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এবং নাগরিক সনদ প্রদানসহ আরও কিছু কাজ চালাচ্ছেন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ইউপির ভবন নির্মাণ না হওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে।