ইউরোপে পণ্য রপ্তানি বাড়াতে সিলেটে ওয়্যার হাউস স্থাপনের দাবি

রপ্তানিকারকদের নিয়ে সিলেট চেম্বার আয়োজিত যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানিবিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক। মঙ্গলবার সিলেট চেম্বার ভবনে
প্রথম আলো

পণ্য রপ্তানির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ঢাকার শ্যামপুরে একটি সেন্ট্রাল ওয়্যার হাউস রয়েছে। যেখান থেকে তিন বছর ধরে ইউরোপে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। সিলেটে এ রকম একটি ওয়্যার হাউস নির্মাণ করলে ইউরোপে পণ্য রপ্তানি বাড়বে।

মঙ্গলবার সিলেট চেম্বার ভবনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে সিলেটের রপ্তানিকারকেরা এই মতামত তুলে ধরেন। সিলেট-লন্ডন-ম্যানচেস্টার পথে চালু হওয়া বিমানের সরাসরি ফ্লাইটে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।

গোলটেবিল বৈঠকে কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেটের কমিশনার মোহাম্মদ আহসানুল হক, সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ারপোর্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ হাফিজ আহমদ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জেলা ব্যবস্থাপক মো. ফারুক আলম আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব।

বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স গ্রুপ সভাপতি মো. হিজকিল গুলজার। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর সিলেট-লন্ডন-ম্যানচেস্টার পথে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে। যা প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে যাত্রী সেবার পাশাপাশি পণ্য রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্য আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’

বহুল কাঙ্ক্ষিত সিলেট-লন্ডন-ম্যানচেস্টার ফ্লাইটে শুধু শাকসবজি রপ্তানির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশীয় পণ্য রপ্তানিতে এগিয়ে আসতে হবে।
আবু তাহের মো. শোয়েব, সভাপতি, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা বলেন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিং চার্জ, স্ক্যানিং চার্জ ইত্যাদি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার অনুরোধ জানান। তাঁরা সাইট্রাস পণ্য (লেবুজাতীয় ফল) রপ্তানিতে বিরাজমান সমস্যা নিরসন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সিলেট অফিসে লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে গতিশীলতা, রপ্তানিযোগ্য পণ্যের পূর্ণাঙ্গ তালিকা রপ্তানিকারকদের সরবরাহ এবং বিমানের স্পেস (জায়গা) ভাড়া হ্রাস করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ‘মুজিব বর্ষে সিলেট-লন্ডন-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট চালু হওয়া সিলেটবাসীর জন্য একটি উপহার। গত অক্টোবর মাসে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রত্যাশিত বরাদ্দ এসেছে। বহুল কাঙ্ক্ষিত সিলেট-লন্ডন-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট শুধু শাকসবজি রপ্তানির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশীয় পণ্য রপ্তানিতে এগিয়ে আসতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্যকে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে আমরা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারব।’

কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ আহসানুল হক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য রপ্তানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। বাংলাদেশ সরকার সব ধরনের রপ্তানি পণ্যকে ট্যাক্সমুক্ত রেখেছে। তিনি রপ্তানিকারকদের সব আইনকানুন মেনে এবং নিরাপদ চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির অনুরোধ জানান।

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেটের অতিরিক্ত কমিশনার মুহাম্মদ রাশেদুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিলেটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেটের উপপরিচালক রতনেশ্বর ভট্টাচার্য, রপ্তানিকারক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, বাংলাদেশ বিমানের সাবেক জেলা ব্যবস্থাপক মো. শাহনেওয়াজ মজুমদার, প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টিন স্টেশনের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. সুলতান মাহমুদ, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খায়রুল আমিন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দ্বিজরাজ বর্মণ প্রমুখ।