ইউরোপে মানব পাচারকারী দলের সদস্য গ্রেপ্তার

নোয়াখালীতে মানব পাচারকারী দলের মো. হানিফ ওরফে মাসুদ (৪০) নামের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জেলা ইউনিট। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলার বাংলাবাজার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার মো. হানিফ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তেরবাগ গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম মৃত আলী আজম। আজ বুধবার সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের পশ্চিম একলাশপুর গ্রামের রফিক উল্যাহর ছেলে আলাউদ্দিন (৩৯) ২০১৯ সালে বিদেশে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী দলের সদস্য মো. হানিফ তাঁকে ইউরোপের দেশ স্পেন যাওয়ার জন্য প্ররোচিত ও প্রলুব্ধ করেন। এ জন্য তাঁর কাছে ১১ লাখ টাকা দাবি করেন। আলাউদ্দিন দাবি, তিনি মো. হানিফকে ১১ লাখ টাকা দেন।

২০১৯ সালের ২০ মার্চ হানিফ হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বিমানযোগে আলাউদ্দিনকে দুবাই পাঠিয়ে দেন। সেখানে পাচারকারীদের অপর দুই সদস্য আলাউদ্দিনকে গ্রহণ করেন। তাঁরা আলাউদ্দিনের কাছে থাকা তিন হাজার ইউরো জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন এবং তাঁকে একটি ভাড়া বাড়িতে রেখে আরও টাকার জন্য চাপ দেন। এতে বাধ্য হয়ে আলাউদ্দিন তাঁদের দেওয়া বাংলাদেশের ব্যাংক হিসাবে একই মাসের ২৫ তারিখে ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। এরপর আলাউদ্দিনকে দুবাই থেকে আফ্রিকার মালিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সিআইডি সূত্রে জানা যায়, মালিতে অবস্থানকারী দুই পাচারকারী আলাউদ্দিনকে গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে পাচারকারী দলের সদস্যরা আলাউদ্দিনের কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে একটি বাড়িতে আটকে রাখেন। সেখানে আলাউদ্দিনসহ ১৯ জনকে জড়ো করে একটি দল তৈরি করা হয়। এরপর একটানা পাঁচ দিন তাঁদের অনাহারে রেখে লরি গাড়িতে চড়িয়ে ও পায়ে হাঁটিয়ে মরক্কোর নাদোর শহরে পাচার করে।

মরক্কোতে আলাউদ্দিনকে গ্রহণকারী চক্রটি তাঁকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে এবং তাঁর ওপর নানা নির্যাতন চালায়। আলাউদ্দিন ফোনে বাড়িতে স্ত্রী সাবিনা আক্তার ওরফে নুপুরকে বিষয়টি জানালে তিনি স্বামীর মুক্তির জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা মো. হানিফকে দেন। পরে সাবিনা বাদী হয়ে মো. হানিফসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় মানব পাচার ও প্রতিরোধ দমন আইনে একটি মামলা করেন।
সিআইডির পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে তাঁরা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেন। এরপর দীর্ঘ অনুসন্ধানে আসামি হানিফের অবস্থান শনাক্ত করে গতকাল বিকেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির একটি দল। গ্রেপ্তারের পর হানিফ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তিনি ও তাঁর বড় ভাই আবদুল ওদুদসহ অন্য আসামিরা আলাউদ্দিনকে বিদেশে পাঠানোর জন্য এ পর্যন্ত ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন।

পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আরও জানান, পাচারের শিকার আলাউদ্দিন বর্তমানে মরক্কোতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ঘটনায় জড়িত মানব পাচার চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার হানিফকে আদালতের মাধ্যমে আজ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।