ইউরোপে যাওয়ার জেদ ছিল সাইফুলের, শেষে ভূমধ্যসাগরে ঠান্ডায় মৃত্যু
এক বছর আগ থেকে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন পেয়ে বসেছিল সাইফুল মিয়াকে (২২)। এর পর থেকে শুধু ‘বিদেশ, বিদেশ’ করতেন। বিদেশে যাবেন বলে সব কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। অবশেষে আড়াই মাস আগে এক দালালের মাধ্যমে ইতালির উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। শেষ পর্যন্ত আর ইতালি পৌঁছাতে পারেননি সাইফুল। লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ঠান্ডায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
সাইফুলের বড় বোন সুজনা বেগম এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সুজনার স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের জগন্নাথপুর এলাকায়। বিদেশ যাওয়ার আগে সাইফুল এই বোনের সঙ্গে থাকতেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বেগনাবাজ ঝাউকান্দি গ্রামে।
সাইফুলের বাবা আয়েস আলী মুদিদোকানি। পাঁচ ভাই, দুই বোনের মধ্যে সাইফুল চতুর্থ। সাইফুলের এক ভাই সোহরাব হোসেন ওমানপ্রবাসী।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সাইফুল এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পড়ায় মনোযোগ না থাকায় শেষে বোনের বাড়ি ভৈরবে চলে আসেন। বোনের স্বামী রওশন গাজীর সঙ্গে ছোটখাটো ব্যবসায় যুক্ত হয়ে পড়েন। ভৈরবে থাকা অবস্থায় ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্ন পেয়ে বসে। শেষে তাঁর এই চাওয়া পূরণে এগিয়ে আসেন প্রবাসী ভাই সোহরাব। সিলেটের এক দালালের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালিতে যাওয়ার বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হন সাইফুল। প্রায় আড়াই মাস আগে দেশ ছাড়েন তিনি।
দালাল প্রথমে সাইফুলকে লিবিয়ায় নিয়ে যান। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার আগে দালালের অধীনে গোপন জায়গায় ছিলেন সাইফুল। সেখান থেকে মাঝেমধ্যে ফোন দিতেন। বোন সুজনার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় ২১ জানুয়ারি। এর পর থেকে সাইফুলের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
সাইফুলের ভগ্নিপতি রওশন গাজী বলেন, ‘আমরা অনেক “না” করেছি, শোনেনি। বিদেশ ছাড়া মুখে আর কথা ছিল না। “না” করলে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিত। সাইফুলের আগ্রহের কারণে শেষে আমরা রাজি হয়েছিলাম। যদি জানতাম বরফ হয়ে মারা যাবে, তাহলে কোনোভাবেই যেতে দিতাম না।’
রওশন গাজী বলেন, সাইফুলের মৃত্যুর সংবাদ আজ রোববার তাঁরা টিভি ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। সরকারের কোনো দপ্তর থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মস্তুফার কাছে এই বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানান তাঁরা।