‘ইকবাল ভবঘুরে ও মানসিক ভারসাম্যহীন নয়, সে চতুর’

কক্সবাজার থেকে ইকবাল হোসেনকে আটক করে পুলিশ
ফাইল ছবি প্রথম আলো

‘ইকবাল ভীষণ ক্লেভার (চালাক)। ঘটনা ঘটিয়ে সুকৌশলে ইকবাল ট্রেনে চড়ে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম যায়। সেখান থেকে বাসে কক্সবাজার যায়। ইকবাল ভবঘুরে ও মানসিক ভারসাম্যহীন নয়। সে চতুর।’

এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কুমিল্লা ও নোয়াখালী বিভাগের বিশেষ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান। কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘির উত্তর পাড়ে অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় করা মামলার তদন্তে অগ্রগতির কথাও জানিয়েছেন তিনি। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার ইকবাল হোসেনকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি।

পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা ১১টি মামলার মধ্যে পাঁচটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে সিআইডি। পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তভার গত ২৪ অক্টোবর সিআইডির কাছে যায়। এরপর গতকাল রোববার দুটি ও সোমবার দুটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে সিআইডি।

সিআইডি বলছে, এসব মামলার তথ্য–উপাত্ত ও গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের বক্তব্য যাচাই করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের আর্থিক লেনদেনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পেছনে থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের দিয়ে কেউ এ কাজ করিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু নাম এসেছে। এগুলো মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় সিআইডির কুমিল্লা ও নোয়াখালী বিভাগের বিশেষ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ইকবালকে কেন্দ্র করে তদন্তের গতি এগোচ্ছে। পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননাকে ঘিরে পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মারধর, ককটেল বিস্ফোরণ ও ডিজিটাল আইনে দায়ের করা পাঁচটি মামলা তদন্ত করছে তারা।

যে পাঁচ মামলার তদন্তে সিআইডি

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘির পাড়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে তৈরি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে প্রতিমার মধ্যে কোরআন রাখার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানা–পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হারুনুর রশিদ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ও কোরআন অবমাননার অপরাধে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করে। এরপর গত ২১ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টায় কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ইকবাল হোসেনকে আটক করা হয়। এর আগে ৯৯৯ নম্বরে কল করা রেজাউল ইসলাম ইকরাম, নগরের দারোগাবাড়ি শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.) মাজারের হুজুর মো. হুমায়ুন কবীর সানাউল্লাহ ও খাদেম আশিকুর রহমান মোহাম্মদ ফয়সলকে আটক করা হয়। তাঁদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২২ অক্টোবর তাঁদের প্রথম দফা সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ২৪ অক্টোবর এ মামলা সিআইডিতে যায়। ২৯ অক্টোবর সিআইডি দ্বিতীয় দফা পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়। বর্তমানে তাঁরা রিমান্ডে রয়েছেন।

১৩ অক্টোবর দুপুরে কুমিল্লা নগরের কাপড়িয়াপট্টি চানমনী কালীবাড়ি মন্দিরে ভেতরে প্রবেশ করে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর, আগুন লাগানো, পুরোহিত ও দর্শনার্থীদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোশারফ হোসেনকে আসামি করা হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে সিআইডি।

১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় সদর দক্ষিণ উপজেলার ঘোষগাঁও এলাকায় পূজামণ্ডপে ককটেল বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সদর দক্ষিণ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফেরদৌস হোসেন বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ মামলাও সিআইডি তদন্ত করছে।

এদিকে নানুয়া দিঘির পূজামণ্ডপের অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলাম মাওলা (২৬) নামের এক যুবক ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন উগ্রবাদী কথা সংযুক্ত করে প্রচার করে। এ ঘটনায় ১৪ অক্টোবর তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ১৫ অক্টোবর ওই ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এ ছাড়া গত ২৫ অক্টোবর নানুয়া দিঘির পাড়ের বাসিন্দা তরুণ কান্তি মোদকের দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাও তদন্ত করছে সিআইডি। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনওয়ারুল আজিম বলেন, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া মামলার নথি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন