ইজারা ছাড়াই পদ্মার বালু তুলে বিক্রি

চরসাদীপুর শিলাইদহ খেয়াঘাট এলাকায় অন্তত আটটি স্থান আছে, যেখান থেকে বালু তোলা হয়। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে এই কাজ

পদ্মার চর থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদিপুর চরেছবি: প্রথম আলো

পদ্মা থেকে বালু তুলে ট্রাক বোঝাই করা হচ্ছে। সেই ট্রাক চলে যাচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এভাবেই প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু তুলে দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে। জায়গাটি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চর সাদিপুর এলাকায়। তবে শিলাইদহ খেয়াঘাট নামে পরিচিত। এর পাশেই পাবনা সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধভাবে ওই এলাকা থেকে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে পাবনা সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলী হাসান জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ওবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিলাইদহ খেয়াঘাট (পাবনা সীমান্ত) এলাকায় বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। যদি কেউ বালু তুলে থাকেন, সেটা অবৈধ। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। পদ্মা নদীর উত্তর দিকেও নদীর ওপারেও কুমারখালী উপজেলার চরসাদীপুর ইউনিয়ন। তবে চরসাদীপুর ইউনিয়ন পাবনা সদর উপজেলাসংলগ্ন। সাদীপুরের পাশেই পাবনা সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়ন। পাবনা ও কুষ্টিয়ার বাসিন্দারা শিলাইদহ খেয়াঘাট (প্রায় সাত কিলোমিটার) পার হয়ে দুই জেলায় যাতায়াত করেন। পদ্মায় প্রতিবছর বালু জমে চর জাগে। সরকারিভাবে কুষ্টিয়ার বেশ কয়েকটি মৌজা ইজারা দেওয়া হলেও পাবনা সীমান্ত চরসাদীপুর এলাকায় (শিলাইদহ খেয়াঘাট) কোনো ইজারা দেওয়া হয় না।

সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার চরে অন্তত আটটি ড্রাম টাক দাঁড়িয়ে আছে। এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে বালু কেটে ট্রাক বোঝাই করা হচ্ছে। স্লিপের মাধ্যমে বালুবোঝাই ট্রাক গ্রামীণ সড়ক দিয়ে পাবনা জেলার মধ্যে ঢুকে পড়ছে।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাবনার কয়েকটি উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলাতে বালুবোঝাই ট্রাক যায়। চরসাদীপুর শিলাইদহ খেয়াঘাট এলাকায় অন্তত আটটি স্থান আছে, যেখান থেকে বালু তোলা হয়। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে এই বালু উত্তোলন।

নদীর চরে ছোট ঘর করে ট্রাকপ্রতি স্লিপ দিয়ে বালুর টাকা নেন দুই ব্যক্তি। তাঁরা নিজদের নাম বলতে রাজি হননি। বালু তোলার ছবি তুলতে গেলে তাঁরা বাধা দেন। কথা বলার একপর্যায়ে আবদুল মালেক পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, ‘আমি তো এখানে শুধুমাত্র স্লিপ দিই ও হিসাব রাখি। কাগজপত্রের বিষয়ে কিছুই জানি না, বুঝিও না। আমার ওপরে “বস” আছেন।’

‘বস’ কারা, জানতে চাইলে কেউই স্পষ্টভাবে কথা বলতে রাজি হন হননি। তবে গ্রামের কয়েকজন বলেন, দোগাছী ও চরসাদীপুর ইউনিয়নের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এই বালু তোলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এর মধ্যে অন্যতম হলেন দোগাছী ইউপির চেয়ারম্যান আলী হাসান।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চেয়ারম্যান আলী হাসান বলেন, ‘আমি বালু উত্তোলন বা বিক্রির সঙ্গ জড়িত নই। ওই এলাকা (সাদীপুর) আমার জেলার বাইরে। সাদীপুরের চেয়ারম্যানই বলতে পারবেন, কারা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে।’

এই চেয়ারম্যান মনে করেন, সরকারের উচিত ঘাটটি ইজারা দেওয়া। তাহলে সরকারও রাজস্ব পাবে। অন্যদিকে এলাকার লোকজনও নিয়ম–নীতি মেনে ব্যবসা করতে পারবেন।

এদিকে বালুবোঝাই ট্রাক চলাচল করায় পাবনার পুরোনো পলিটেকনিক্যাল থেকে শিলাইদহ খেয়াঘাট পর্যন্ত সড়কটির পাশের বাসিন্দারের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। সড়কের বেশ কয়েক জায়গায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

চরসাদিপুর ইউপির চেয়ারম্যান হোসেন বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি প্রশাসন জানে। কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, সেটা প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে। তাঁর কিছু বলার বা করার নেই। বালু তোলার ফলে স্থানীয় গ্রামীণ সড়কগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা খুবই কঠিন।

পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, পাবনার অংশে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু শিলাইদহ পয়েন্টটি কুষ্টিয়ার সীমানায় হওয়ায় প্রশাসনিক কারণে সেখানে অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।