ইজিবাইকের দাপটে যানজট, ভোগান্তি

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এভাবেই লেগে থাকে ইজিবাইকের জট। বাটার মোড় এলাকা, নওগাঁ, ৪ মার্চ বিকেল
প্রথম আলো

নওগাঁ শহরের বাজার এলাকায় অন্তত তিন কিলোমিটার অংশজুড়ে প্রধান সড়কে ইদানীং অসহনীয় যানজটে নাকাল হচ্ছেন শহরবাসী। সরু রাস্তা ও ইজিবাইকগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচল করায় শহরের বাজার এলাকা হিসেবে পরিচিত তাজের মোড়, বাটার মোড় ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। জেলা শহরেও এমন যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীকে।

নওগাঁ শহরের প্রধান সড়কের দুই পাশে তাজের মোড়, বাটার মোড়, ব্রিজের মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, মুক্তির মোড়, রুবির মোড় ও দয়ালের মোড় এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় বড় বিপণিবিতান, ব্যাংক, বিমাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। শহরের এসব বাজার এলাকার ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া প্রধান সড়কটির প্রস্থ কোথাও ১৬ ফুট, আবার কোথাও ৮ ফুট। এ সড়ক দিয়ে রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, অটোরিকশাসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে কিছুদূর পরপর গড়ে উঠেছে ইজিবাইক ও অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। ফলে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।

গত কয়েক দিন শহরের ওই সব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাজার এলাকায় কিছুদূর পরপর যানজট লেগে থাকে। রাস্তায় চলা যানবাহনের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশই ইজিবাইক। আগে যাওয়ার জন্য একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লেগে থাকে ইজিবাইকগুলো। মানা হয় না কোনো ট্রাফিক আইন। অনেক ইজিবাইক এক থেকে দুজনের বেশি যাত্রী পাচ্ছে না। অথচ একটি ইজিবাইকে আটজন যাত্রী বসতে পারে। শহরের তাজের মোড় থেকে মুক্তির মোড় পর্যন্ত প্রধান সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় কিছুদূর পরপর গড়ে উঠেছে ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। ইজিবাইক ও অটোরিকশার স্ট্যান্ডের কারণে রাস্তাই অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

নওগাঁ পৌরসভার হিসাবমতে, শহরের আয়তন ৩৮ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার। ২০১০ সাল থেকে শহরে চলাচলে ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের পর থেকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ছোট এই শহরে পৌরসভার লাইসেন্সধারী ইজিবাইক রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। এর বাইরে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক আছে আরও প্রায় সাত হাজার। এ ছাড়া মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাসসহ ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে আরও প্রায় আট হাজার।

শহরের বাটার মোড় এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী মানস কুমার বলেন, ইজিবাইক ও অটোরিকশাগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সড়কের মোড়গুলোতে গোলচত্বর বা ইউটার্ন না থাকায় যেখানে-সেখানে সড়কের ওপর ইজিবাইগুলো ইচ্ছেমতো ঘোরানো হচ্ছে। সিগন্যাল ছাড়াই হঠাৎ করে রাস্তায় গাড়ি ঘোরানোর ফলে মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির সঙ্গে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। ইজিবাইকচালকদের এসব নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে মারামারির ঘটনাও ঘটে।

এদিকে চালকদের দাবি, শহরের ভেতরে ইজিবাইকের কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। বৈধ স্ট্যান্ড বা ফাঁকা কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তাঁদের রাস্তার ওপরেই ইজিবাইকগুলো দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। এ ছাড়া বৈধ ইজিবাইকের বাইরেও শহরে অবৈধভাবে কিছু ইজিবাইক চলাচল করে।

শহরে ইজিবাইক চালান এমন দুজন চালক আবদুল কাদের ও জাহিদুল ইসলাম বলেন, পৌরসভা থেকে যে পরিমাণ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তার দ্বিগুণের বেশি ইজিবাইক অবৈধভাবে শহরে চলাচল করে। অবৈধ ইজিবাইকের বিষয়ে কড়াকাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শহরে গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে যাবে। ফলে যানজট সমস্যাও কমে আসবে।

নওগাঁ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল করিম বলেন, কিছু কারণে নওগাঁ শহরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে নওগাঁ শহরের বাজার এলাকার মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া প্রধান সড়কটিতে প্রতিদিন যে পরিমাণ যান চলাচল করে, সে তুলনায় সড়কটি সংকীর্ণ। সেই সংকীর্ণ সড়কটিও আবার হকাররা দখল করে রাখছেন। যানজটের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে ইজিবাইক ও অটোরিকশার জন্য শহরে কোনো বৈধ স্ট্যান্ড না থাকা। এ কারণে ইজিবাইক ও অটোরিকশাগুলো রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকায় রাস্তার অনেকটা অংশ দখল হয়ে থাকে। শহরের বাজার এলাকায় পথচারীদের হাঁটার জন্য প্রধান সড়কের দুই পাশে কোনো ফুটপাথ নেই। ফলে পথচারীরা রাস্তার মধ্য দিয়ে, গাড়ির ফাঁক দিয়ে চলাচল করছে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন, অপ্রশস্ত সড়ক ও নানা অব্যবস্থাপনায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সীমিত জনবল নিয়ে পুলিশ ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করছে। পৌরসভা, পুলিশ ও বণিক সমিতি সবাই মিলে সম্মিলিত উদ্যোগ নিলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ কাজে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে সবার আগে উদ্যোগ নিতে হবে।

১০ বছর ধরে নওগাঁ পৌরসভার দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপির মেয়র নজমুল হক। তিনি বলেন, অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। ইজিবাইক ও অটোরিকশার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলেই চালকেরা আন্দোলন করেন। যানজট সমস্যা ইদানীং প্রকট আকার ধারণ করেছে। পৌর শহরের যানজট নিরসনে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইজিবাইকের জট নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।