ইটনার পর এবার নিকলী ও মিঠামইনের হাওরে ঢলের পানি

পাহাড়ি ঢলে ধানখেত তলিয়ে যাওয়ায় আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকেরা। বুধবার কিশোরগঞ্জের নিকলী-মিঠামইনের সীমানায় অবস্থিত কুনকুনিয়ার হাওরে
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের ইটনার পর এবার নিকলী ও মিঠামইন উপজেলার বিভিন্ন হাওরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকছে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কয়েক শ কৃষক। অনেকে ফসল বাঁচাতে কোদাল-খাদি দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন।

কেউ কেউ আবার রাত জেগে বাঁধের কিনারে বসে পাহারা দিচ্ছেন। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন অনেক কৃষক।

নিকলী উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, বুধবার সকাল থেকে নিকলীর সিংপুর এলাকায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ঘোলা পানি প্রবেশ করছে। এতে ধনু নদের তীরবর্তী এলাকার ধানখেত পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। অনেকে তড়িঘড়ি করে আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন।

নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৫৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে তাঁর এলাকা নিকলীর সিংপুর ঘোলা পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ফলে জাইলভাঙ্গা বাঁধ, ঘোরাদিঘা বাঁধ ও ঘাগড়া খাল বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। বাঁধ রক্ষায় সম্মিলিত চেষ্টা চলছে। নিকলী উপজেলায় এবার ১৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।

এদিকে বুধবার সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হচ্ছে মিঠামইন-নিকলী সীমানায় অবস্থিত কুনকুনিয়ার হাওর। স্থানীয় কৃষক সেলিম উদ্দিন বলেন, বুধবারের পানিতে কুনকুনিয়ার হাওরে তাঁর প্রায় দুই একর ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ঋণ করে আবাদ করা জমির ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তিনি আছেন দুশ্চিন্তায়।

গত শনিবার থেকে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে ইটনা উপজেলার ধনপুর ও মৃগা, ইটনা সদরের এরশাদ নগর, চিড়া গাঙ, বলদা এবং এলংজুড়ি, কুলিভিটা, ছিলনী, বাহেরচর, পাঙ্গাশিয়া, জিওলের হাওরসহ কয়েকটি এলাকার আধা পাকা ও কাঁচা ধানের জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। বুধবার থেকে ইটনার নতুন নতুন এলাকাসহ নিকলী ও মিঠামইনের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলায় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৯০ হেক্টর। এর মধ্যে শুধু হাওরাঞ্চলে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমি। হাওরবহির্ভূত উজান এলাকায় চাষ হয়েছে ৬৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি।

২০২১-২২ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে কিশোরগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলায় ৯৬ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ কোথাও কোথাও এখনো বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। এ ছাড়া এসব বাঁধের মান নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, গত শনিবার থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে নেত্রকোনার জেলার খালিয়াজুরি হয়ে কিশোরগঞ্জের ধনু নদ ও ঘোড়াউত্রা নদীতে প্রবল বেগে পানি আসায় হঠাৎ পানি বেড়ে যায়। এতে নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকার খাল-বিলের জমি তলিয়ে গেছে। তবে মূল হাওরগুলো রক্ষায় কৃষকদের নিয়ে বাঁধ মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা।