ঈদ বোনাস না দেওয়ার ঘোষণায় রাজশাহীতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ঈদ বোনাস না দেওয়ার ঘোষণায় রাজশাহীতে একটি ওষুধ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করছেন। বুধবার সকাল ১০টায় নগরের সাগরপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঈদের আগে বোনাস না দেওয়ার ঘোষণায় রাজশাহীর একটি ওষুধ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ করেছেন। আজ বুধবার সকালে নগরের সাগরপাড়া এলাকায় কারখানার ফটকের সামনে তাঁরা এই বিক্ষোভ করেন।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মচারীরা বলছেন, প্রতি ঈদেই তাঁদের এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারখানার মালিকেরা তাঁদের ঈদের আনন্দ মাটি করে দেন। এদিকে কর্তৃপক্ষ বলছে, আর্থিক সংকটের কারণে তারা এ মুহূর্তে বোনাস দিতে পারছে না।

পুলিশ ও শ্রমিক-কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া এলাকায় অবস্থিত কেমিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা আজ সকাল আটটায় কাজে যোগ দেন। কিছুক্ষণ পরেই তাঁরা জানতে পারেন, এবার তাঁদের বোনাস দেওয়া হবে না। তখনই প্রায় ৩৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের সময় কারখানার কাচের দরজা ভাঙচুর করা হয়েছে। শ্রমিকেরা কারখানার ফটক থেকে শুরু করে কার্যালয়ে ঢোকার বারান্দা পর্যন্ত বোনাসের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

২২ বছর ধরে তিনি এই কারখানার প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। তাঁর বেতন মাত্র ছয় হাজার টাকা। আজ মে মাসের ১২ তারিখ। তাঁদের এখনো এপ্রিল মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। ঈদের এক দিন বাকি আছে। এখনো বোনাস দেওয়া হয়নি।
লাবণী খাতুন, কারখানার শ্রমিক
ঈদ বোনাস না দেওয়ার ঘোষণায় রাজশাহীতে একটি ওষুধ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বুধবার সকাল ১০টায় নগরের সাগরপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কারখানাটির শ্রমিক লাবণী খাতুন বলেন, ২২ বছর ধরে তিনি এই কারখানার প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। তাঁর বেতন মাত্র ছয় হাজার টাকা। আজ মে মাসের ১২ তারিখ। তাঁদের এখনো এপ্রিল মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। ঈদের এক দিন বাকি আছে। এখনো বোনাস দেওয়া হয়নি। অথচ প্রতিষ্ঠানের একেকজন কর্মকর্তার ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা করে বেতন। সব কর্মকর্তা বেতন পেয়ে গেছেন। তাঁদের মতো শ্রমিকেরাই শুধু বাকি রয়েছেন।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ কারখানার কার্যালয়ে বসে আছেন। শ্রমিকদের ঘিরে রেখেছে একদল পুলিশ। ওসি বলেন, প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তাঁর স্ত্রী গত ছয় মাসের ব্যবধানে মারা গেছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পরে স্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে তাঁর ছেলে নূরুল কালাম এখন মালিক। তিনি ঢাকায় আছেন। কারখানার নাকি আর্থিক সংকট যাচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে মালিকের সঙ্গে কথা বলে কারখানার প্রধান সিদ্ধান্ত দেবেন। উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে।

কারখানার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কেমিস্ট মো. হামিদ খান। তিনি বলেন, আগের দিন পর্যন্ত তাঁরা জানতেন, বেতন ও বোনাস আজ একই সঙ্গে দেওয়া হবে। ব্যাংকে লেনদেনের সমস্যা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানেরও আর্থিক সংকট। তাই প্রধান কার্যালয় থেকে তাঁকে বলা হয়েছে শুধু এপ্রিল মাসের বেতন দেওয়ার জন্য। এ ঘোষণা দেওয়ার পরই শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন।