‘ঈদের দিন পোলাও খাবার পাম’

ত্রাণ নিয়ে ফিরছে শিক্ষার্থীরা। রোববার কুড়িগ্রাম প্রথম আলো চরে।
ছবি: প্রথম আলো

‘আমরা দুই ভাই, এক বোন। বাবা ছাড়া উপার্জন করার কেউ নাই। খুব সমস্যায় পড়ছি। এগলা কয়েক দিন খাবার পাম।’

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহায়তায় রোববার উপহার হাতে পেয়ে হাসিমুখে এ কথা বলে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম।

সিরাজুল ইসলামের বাবা মো. নুরুজ্জামান ঢাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে করোনা মহামারি শুরুর আগে রিকশা চালানোর সময় দুর্ঘটনায় আহত হন। তখন থেকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে আছেন।

রোববার দুপুরে কুড়িগ্রামের প্রথম আলো চরের আলোর পাঠশালা মাঠে বন্ধুসভার সহায়তায় ২৭০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এ সময় তারা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং মাস্ক পরে উপহারসামগ্রী গ্রহণ করে।

কুড়িগ্রাম বন্ধুসভার সহায়তায় দেওয়া ত্রাণের মধ্যে ছিল পোলাওয়ের চাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, ডাল ও গরমমসলা।

পোলাওয়ের চাল দেখে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিমা বেগম বেশ খুশি। তার বাবা ফুলবদ্দি পেশায় দিনমজুর। মেয়েকে নিয়ে ত্রাণ নিতে এসেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে খুব অসুবিধায় আছি। কাম নাই, কাজ নাই। ঈদের দিন ছাওয়াপাওয়ার মুখোত ভালোমন্দ কিছু তুলি দেম, সে উপায় নাই। তোমারগুলার দেওয়া ত্রাণ পায়া খুব উপকার হইল।’

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমা বেগমের বাবা বিবুর উদ্দিন দিনমজুর। করোনা শুরুর আগে কাজ করতে রাজধানী ঢাকায় যান। এখনো বাড়িতে ফেরেননি।

নাজমা বলে, ‘সামনে ঈদ। বাবা এ্যালাও আসে নাই। বাড়িত সবাই চিন্তায় আছে। খাওয়াদাওয়ার খুব অসুবিধা। ত্রাণ পায়া উপকার হইল।’ সে বলে, ‘চরের যে অবস্থা, মানুষ বসি আছে। ঈদের আনন্দ নাই।’

মাছ শিকার করে সংসার চালান চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শরীফা বেগমের বাবা বাহাদুর। শরীফা বলে, ‘নদীত পানি বাড়ায় এখন মাছ পাওয়া যায় না। বাবা বেকার অবস্থায় বাড়িত বসি। কষ্ট করি চলবার নাগছি। এ উপহারগুলা দিয়া কয়েক দিন চলবার পাম।’

ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন চরের বাসিন্দা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আবদুস সোবান ব্যাপারী, ফজলার রহমান, সহিদুল ইসলাম, সাইফুদ্দিন মিয়া। পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান, সহকারী শিক্ষক আবদুল কাদের, জেলা প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি আসিফ ওয়াহিদ, সাধারণ সম্পাদক রাজু আহাম্মেদ, তৌহিদ আহাম্মেদ, হাসান রানা, সফিকুল ইসলাম ও প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সফি খান।