ঈশ্বরগঞ্জে ‘জিনের বাদশা’র ফাঁদে গৃহবধূ খোয়ালেন ৬৫ হাজার টাকা

ঈশ্বরগঞ্জে কথিত জিনের বাদশার দেওয়া পিতলখণ্ড। প্রতারণার শিকার গৃহবধূ প্রতারকের কথামতাে মাটি খুঁড়ে খণ্ডটি বাড়ি নিয়ে আসেন
সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে কথিত জিনের বাদশা গৃহবধূর সঙ্গে প্রতারণা করে ৬৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিকবার গৃহবধূকে ফোন করে নানা ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় টাকা হাতিয়ে নেন ওই প্রতারক।

প্রতারণার স্বীকার ওই গৃহবধূ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের চর আলগী গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল কাশেমের (৫০) স্ত্রী। কাশেম জানান, প্রতারণার ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তিনি স্ত্রীর মুখ থেকে ঘটনাটি শুনে হতবাক হয়ে পড়েন।

প্রতারণার ঘটনার শুরু হয় গত ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে কথিত জিনের বাদশার ফোন করার পর থেকে। এরপর ৬৫ হাজার টাকা খুইয়ে নিজের বোকামি বুঝতে পেরে গতকাল রোববার রাতে গৃহবধূ তাঁর স্বামী আবুল কাশেমকে সব খুলে বলেন। আবুল কাশেম আজ সোমবার সন্ধ্যায় থানায় এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

গৃহবধূ কথিত জিনের বাদশার কথা বিশ্বাস করে ঘটনাটি পরিবারের কাউকে বলেননি। তবে প্রতারকের দেওয়া একটি বিকাশ ও একটি নগদ নম্বরে কয়েক দফায় ৬৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। পরে টাকা পাঠানোর নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

আবুল কাশেম জানান, ২৫ ডিসেম্বর কথিত জিনের বাদশা আবুল কাশেমের স্ত্রীর কাছে ফোন করে কোনো এক পাহাড়ে তিনি অবস্থান করছেন বলে জানান। কথিত অলৌকিক ক্ষমতাবলে তাঁর সংসারের নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে সব ঠিকঠাক বলতে পেরে তাঁর স্ত্রীর বিশ্বাস অর্জন করেন। আলাপচারিতার একপর্যায়ে তাঁর সংসার ও সন্তানের ওপর আসন্ন বিপদ নিয়ে নিয়ে নানা ভীতিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে সন্তানের অমঙ্গলের ভয় দেখিয়ে ফোনদাতা তাঁর (জিনের বাদশার) কথা মেনে চলতে অঙ্গীকার করান।

জিনের বাদশা গৃহবধূকে বলেন, বিপদ কাটানোর পথ তিনি বের করে রেখেছেন। পরদিন গভীর রাতে গৃহবধূকে একটি জায়গার কথা বলেন (জিনের বাদশার নির্দিষ্ট করা স্থান), সেখানে মাটি খুঁড়ে একটি ধাতব খণ্ড বাড়িতে নিয়ে আসতে বলেন। সেটি তাঁর সংসারের সব বিপদ কাটিয়ে দেবে বলে জানান। এটি একটি ‘কুদরতি খণ্ড’ বলে জানান জিনের বাদশা। এই কুদরতি খণ্ড কিছুদিন নিজের হেফাজতে রেখে দিলে তা সোনায় পরিণত হবে। আর কোনো রকম অবহেলা প্রদর্শন করলে ক্ষতি হতে পারে বলে গৃহবধূকে ভয় দেখানো হয়। এসব কথা সংসারের কাউকে না বলতে গৃহবধূকে শপথ করান কথিত জিনের বাদশা।

১০ দিন অপেক্ষার পরও ধাতব খণ্ডের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আবুল কাশেম, প্রতারণার শিকার গৃহবধূর স্বামী

কাশেম বলেন, তাঁর স্ত্রী কৌতূহল ও কিছুটা ভয় নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে মাটি খুঁড়ে চিপসের প্যাকেট দিয়ে মোড়ানো পিতলের রং করা একটি খণ্ড তুলে আনেন। এরপর ফোনদাতা আবার ফোন করে কুদরতি খণ্ডটি পেয়েছেন কি না, গৃহবধূর কাছে জানতে চান। গৃহবধূ হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলে একটি সুরা পাঠ করতে বলা হয়। পাঠ শেষে ফোনদাতা মক্কা ও মদিনার পাহাড়ে চার হাজার মেহমানকে খাওয়ানো ও তাঁদের উপঢৌকন প্রদানের কথা বলেন। এ জন্য টাকা খরচ করতে হবে বলে জানান। তাই গৃহবধূ যেন এক লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পৌঁছার পর পিতলের খণ্ডটি সোনার খণ্ডে পরিণত হবে। তখন ওই স্বর্ণখণ্ড থেকে সোনা বিক্রি করে সংসারের কাজে লাগাতে বলেন।

গৃহবধূ কথিত জিনের বাদশার কথা বিশ্বাস করে ঘটনাটি পরিবারের কাউকে বলেননি। তবে প্রতারকের দেওয়া একটি বিকাশ ও একটি নগদ নম্বরে কয়েক দফায় ৬৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। পরে টাকা পাঠানোর নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ফোনদাতা আবার ফোন করে গৃহবধূকে আশ্বাস দিয়ে জানান, চার দিন অপেক্ষার পর ধাতব খণ্ডটি পরিবর্তন হয়ে সোনার খণ্ডে পরিণত হবে।

আবুল কাশেম বলেন, গত ১০ দিন অপেক্ষার পরও ধাতব খণ্ডের কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরে তাঁর স্ত্রী ঘটনাটি স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের অবহিত করেন। প্রতারণার ঘটনাটি পাড়ার লোকজনও জানতে পারেন। সবাই ঘটনা শুনেই বুঝতে পারেন, প্রতারকের কাছে টাকা খুইয়েছেন গৃহবধূ।

আজ বিকেলে ঈশ্বরগঞ্জ থানা থেকে আবুল কাশেম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেওয়ার জন্য গেছেন।

পরে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাদের মিয়া জানান, অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।