উজানের ঢলে সুনামগঞ্জে আবারও বাড়ছে পানি

পাহাড়ি ঢলের পানিতে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় মানুষজন যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পড়েছেন। আজ শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ–বিশ্বম্ভরপুর সড়কের লালপুর এলাকায়
প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে চার দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে জেলার নদ-নদী ও হাওরে আবার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে জেলায় চতুর্থ দফা বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই মুহূর্তে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সব উপজেলায় কমবেশি রোপা আমন নিমজ্জিত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চার দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। একই সময়ে উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৪২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মূলত উজানে বৃষ্টি হওয়ায় সুনামগঞ্জে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে। এ কারণে সুরমাসহ জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, জেলায় ২ হাজার ১৯০ হেক্টর জমির রোপা আমন নিমজ্জিত হয়েছে। যদিও স্থানীয় কৃষকেরা দাবি করছেন, ফসল ডুবে যাওয়া জমির পরিমাণ আরও বেশি। তিন দফা বন্যায় এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। এখন আমনের ফলন নিয়ে হতাশা ঘিরে ধরছে তাঁদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় উজানের পাহাড়ি ঢল প্রথমে আঘাত হানে। উজানে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করে। গতকাল শুক্রবার রাতে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার আট সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ঢলের পানিতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আজ শনিবার সকালে একহাঁটু পানি ছিল। একইভাবে ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার আমনের খেত।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, হঠাৎ করে উজানে ঢল নামায় উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো বন্যা কবলিত হতে যাচ্ছে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা। মানুষজন আবার ভোগান্তিতে পড়েছে। উপজেলার মক্তিখলা গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘তিন দফা বন্যার কারণে এবার সুনামগঞ্জে কৃষকেরা আমনের আবাদ করতে গিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার। শুরুতে চারাসংকট ছিল। তারপরও কষ্ট করে ধান লাগালাম। এখন ঢলে সব শেষ করে দিয়েছে। সুনামগঞ্জে আমনের আর আশা নেই।’

ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের লালপুর, আসামপুর এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের বেরাজালি, আহমদাবাদসহ কয়েকটি এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা, আনোয়ারপুর এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা শফিক আহমদ বলেন, ‘ঢল নামলেই আমরা বেকায়দায় পড়ি, সড়ক প্লাবিত হয়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এবারও তা–ই হয়েছে। মানুষজন বিপদে আছে।’

সুনামগঞ্জে এ বছর প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয় গত ২৫ জুন। এরপর কিছুটা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও আবার দ্বিতীয় দফা বন্যা শুরু হয় ১০ জুলাই থেকে। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগেই আবার ২৬ জুলাই থেকে তৃতীয় দফা বন্যা শুরু হয়। এখন দুই মাস না যেতেই আবার উজানের ঢলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার ঢলের পানিতে ধরমপাশা উপজেলায় ৭৫০ হেক্টর, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৪০০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৩০০ হেক্টর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ২৭৫ হেক্টর, তাহিরপুর উপজেলায় ২২০ হেক্টর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমির  আমন ধান নিমজ্জিত হয়েছে। অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সফর উদ্দিন বলেন, যদি পানি দ্রুত নেমে যায়, তাহলে ক্ষতি কম হবে। এক সপ্তাহের ওপরে পানি থাকলে ক্ষতি বেশি হবে।

পাউবো সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী প্রীতম পাল বলেন, গতকাল রাতের তুলনায় সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমে আজ বিপৎসীমা বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে। ঢল নামা অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়বে। তবে ঢল যদি কম নামে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।