উজিরপুরে প্রধান শিক্ষকের গাফিলতিতে ৫৮ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

জেড এ খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জেড এ খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবীরের গাফিলতিতে বিদ্যালয়ের ৫৮ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ওই ৫৮ শিক্ষার্থীর তথ্য শিক্ষা বোর্ডে না পাঠানোয় তারা নবম শ্রেণিতে ওঠার বৈধতা পায়নি। এতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার হতাশায় পড়েছে।

শিক্ষার্থী ও ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা হয়নি। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি নির্দেশনা দেয়, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করতে হবে।

এ বিষয়ে গত বছরের ৬ থেকে ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে জেএসসি পরীক্ষার্থীদের তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করে শিক্ষা বোর্ডে পাঠানোর জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনাটি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। তবে জেড এ খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবীর চিঠি পেয়েও এ বিষয়ে গুরুত্ব দেননি। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তথ্য বোর্ডে পাঠাননি।

জেড এ খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. ইউনুস খান অভিযোগ করে বলেন, হুমায়ুন কবীরকে বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তিনি ফরম পূরণ করে কোনো তথ্য পাঠাননি। ফলে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা শূন্য।

৫৮ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তাদের তথ্য বোর্ডে পাঠাতে বিলম্ব হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
হুমায়ুন কবীর, প্রধান শিক্ষক

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের ৫৮ জন জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। চলতি সপ্তাহে ওই ৫৮ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন করতে গেলে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড সেটি প্রত্যাখ্যান করে। এরপর প্রধান শিক্ষক গোপনে দৌড়ঝাঁপ শুরু করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

অভিভাবক সিদ্দিকুর রহমান ও নাসরিন সুলতানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে অবহেলার কারণে সন্তানদের শিক্ষাজীবন নষ্ট হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনার বিচার হওয়া উচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক শিক্ষার্থী বলেন, তারা অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টাকাও নিয়েছে। এখন তারা নবম শ্রেণির ক্লাস করছে। কিন্তু হঠাৎ শোনা যাচ্ছে, তারা বৈধ শিক্ষার্থী নয়। এতে তারা শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশায় ভুগছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘৫৮ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তাদের তথ্য বোর্ডে পাঠাতে বিলম্ব হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সংশোধনের জন্য বোর্ডের শরণাপন্ন হয়েছি, আশা করি সমাধান হবে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউনুস খান বলেন, এ ঘটনায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরি সভায় প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং তাঁর বেতন স্থগিত করা হয়েছে। ৫৮ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের সংকট সমাধানে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখার জন্য বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার গাইন বলেন, জেড এ খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫৮ শিক্ষার্থীকে জেএসসিতে উত্তীর্ণ দেখিয়ে নবম শ্রেণিতে ওঠার বৈধতা চেয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদন করেছেন। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে দায়িত্বে অবহেলার জন্য প্রধান শিক্ষক ও ঘটনায় জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।