উত্তরাঞ্চলে আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, দুর্ভোগে জনজীবন

বোরো ধান রোপণের জন্য পাওয়ারটিলার দিয়ে শীতের মধ্যেই জমি চাষ করছেন এক কৃষক। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার দেওয়ানহাট এলাকায়
রাজিউর রহমান

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলাগুলোতে আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। মাঘের তীব্র শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জনজীবন। উত্তরের হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগে বুধবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন দুপুরের পর স্বল্প সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও রোদের তীব্রতা ছড়াতে পারেনি। বেলা ৩টার দিকে তেঁতুলিয়া দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বুধবার দিনভর রোদের তীব্রতা না থাকায় বিকেল হতে না হতেই শীতের তীব্রতা বাড়েতে শুরু করে। রাতভর উত্তরের হিমেল বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির মতো টিপটিপ করে ঝরে কুয়াশা। কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত। এরপর ধীরে ধীরে কিছুটা পরিষ্কার হয়ে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও নেই রোদের তীব্রতা। এক সপ্তাহ ধরে তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করলেও আজ তা ঠেকে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে।

সকালের কুয়াশায় তো ১০ হাত দূরেও দেখা যায় না। বাতাসের কারণে হাত-পা আর কানে সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা লাগছে। ঠান্ডায় সেচের পানি দেওয়া জমিতে হাল দিতে আরও বেশি কষ্ট।
জাহিদুল ইসলাম, পাওয়ারটিলারের চালক

কয়েক দিন ধরে বিকেল হতে না হতেই পঞ্চগড়ে শুরু হচ্ছে উত্তরের হিমেল বাতাস। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা, থাকছে সকাল পর্যন্ত। দিনভর কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে থাকছে শীতের আমেজ। দুপুরে স্বল্প সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও উত্তরের হিমেল বাতাসে রোদের তীব্রতা ছড়াতে পারছে না। রাতভর উত্তরের ঝিরিঝিরি ঠান্ডা বাতাসে কাবু হয়ে পড়ছে এই জনপদের মানুষ।

পঞ্চগড় হিমালয়ের পাশের জেলা হওয়ায় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা হিম বায়ুর কারণে এই জেলায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদেরা। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। উত্তরের হিম বায়ুর পাশাপাশি ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি মনে হচ্ছে। আকাশের উপরিভাগে কুয়াশা থাকায় দিনেরবেলা রোদের তীব্রতা ছড়াতে পারছে না। জানুয়ারি মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই রকম আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে।

প্রায় প্রতিদিনই কুয়াশার কারণে মহাসড়কে যানবাহনগুলো চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। সবুজ ঘাস–সবজিখেতে জমছে শিশির বিন্দু। ঠান্ডা বাতাসে কাবু হয়ে পড়া মানুষ গরম কাপড়ের পাশাপাশি অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের প্রকোপে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছেন সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ জেলার অন্য চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েক দিন ধরে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেশি অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

কাঁধে বহন করে জমিতে জৈব সার নিয়ে যাচ্ছেন এক কৃষক। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার গোফাপাড়া এলাকায়
রাজিউর রহমান

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিশুবিশেষজ্ঞ মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এই শীতে শিশুদের সকালে আর রাতে বাইরে বের না করাই ভালো। তবে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে অবশ্যই ভালোভাবে গরম কাপড়ে ঢেকে নিতে হবে। এ সময় ঠান্ডা লাগলে সর্দি-কাশি ছাড়াও শিশুর নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া হতে পারে। বর্তমানে হাসপাতালে এ ধরনের শিশু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এ ছাড়া শীতের সময় শিশুদের বাসি খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকাসহ নবজাতকদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আজ সকালে শীতের মধ্যে জমিতে কাজ করছিলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার গোফাপাড়া এলাকার কৃষক আবুল কালাম (৬০)। তিনি বলেন, বোরো ধান রোপণের জন্য জমি ঠিক করছেন। সকালে জৈব সার দিতে বের হয়ে ঠান্ডার কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না।

পাওয়ারটিলারের চালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, সকালের কুয়াশায় তো ১০ হাত দূরেও দেখা যায় না। বাতাসের কারণে হাত-পা আর কানে সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা লাগছে। ঠান্ডায় সেচের পানি দেওয়া জমিতে হাল দিতে আরও বেশি কষ্ট।