উত্ত্যক্তের ঘটনা সামলাতে গিয়ে হামলার শিকার ইউপি চেয়ারম্যান

আহত ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর সেনবাগে পুকুরঘাটে গোসল করতে যাওয়া দুই কিশোরীকে উত্ত্যক্তের জেরে সৃষ্ট উত্তেজনা থামাতে গিয়েছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। তিনিও হামলার শিকার হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে তাঁর গাড়ি। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে কিশোরীদের বাড়িঘরে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে পলাতক আছেন উত্ত্যক্তকারী।

উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা হামলাকারী চারজনকে আটক করে। খবর পেয়ে সেনবাগ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও আটক ব্যক্তিদের থানায় নেয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন অন্তর ওরফে আলাউদ্দিন (১৯), টিপু ওরফে রমজান আলী (২৪), আবদুল গনি ওরফে পারভেজ (২৫) ও ইমরান হোসেন ওরফে শান্ত (২০)।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে দুই কিশোরী তাঁদের বাড়ির পুকুরঘাটে গোসল করতে যায়। এ সময় একই এলাকার মো. রবি (২০) কিশোরীদের উত্ত্যক্ত করেন। এর মধ্যে এক কিশোরীর জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলেন রবি। তাৎক্ষণিক ওই কিশোরীর মা ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ও স্থানীয় ইউপি সদস্যকে ঘটনাটি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিকেলে রবি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে দুই কিশোরীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালান।

এরপর এক কিশোরীর পরিবার ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে ঘটনাটি জানান। চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেনের পরামর্শে তাঁর সামনেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান কিশোরীটির মা। থানা-পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেন ওই নারী। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আসেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইউপি সদস্য আবদুস সোবহান ও একজন গ্রাম পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠান চেয়ারম্যান। পরে তিনি নিজেই রাত আটটার দিকে ঘটনাস্থলে যান বেলায়েত। তিনি উত্ত্যক্তকারীদের বকা দেন ও রবিকে চড়থাপ্পড় দিয়ে তাঁর গাড়িতে তুলে নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিকে আটক করায় তাঁর সহযোগীরা অতর্কিতে চেয়ারম্যান ও তাঁর গাড়িতে হামলা করেন। এতে গাড়ির কাচ ভেঙে যায় এবং চেয়ারম্যান বাঁ চোখে আঘাত পান এবং তাঁর কপাল ফেটে যায়। এ ছাড়া চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা তাঁর ভাগনে নজরুল ইসলামও আহত হন। তাঁকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে গ্রামের বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধাওয়া করে হামলাকারীদের চারজনকে আটক করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে উত্ত্যক্তকারী রবি পালিয়ে যান।

চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরীদের উত্ত্যক্ত ও বাড়িতে হামলার ঘটনা তিনি সেনবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান ও আবদুল আউয়ালকে জানালেও তাঁরা সময়মতো ঘটনাস্থলে আসেননি। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পরবর্তীকালে তিনি ঘটনাস্থলে গেলে তাঁর ওপরও হামলা চালানো হয়।

সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরীকে উত্ত্যক্তের ঘটনার জেরে বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ইউপি চেয়ারম্যান সেখানে গিয়ে শাসন করতে গিয়ে কয়েকজনকে চড়থাপ্পড় দেন। রবি নামের একজনকে নিজের গাড়িতে তুলে নেন। এরপর চেয়ারম্যানের ওপর ও তাঁর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।

উত্ত্যক্তের ঘটনায় থানায় এক কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন জানিয়ে ওসি ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ওই মামলার অভিযোগে চেয়ারম্যানের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আজ বুধবার দুপুরের দিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।