উদ্বোধনের অপেক্ষায় গৌরীপুরের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প

গৌরীপুরের এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হলে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আরও ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ
সংগৃহীত

বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে স্থাপিত দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ভাঙ্গনামারি গ্রামে ১৭৪ একর জমির ওপর ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছর কেন্দ্রটি চালু হতে পারে। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেওয়াটখালী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের পরিকল্পনার আওতায় ২০১৭ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ময়মনসিংহে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়।

বাংলাদেশ সরকারের তদারকিতে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের যৌথ প্রতিষ্ঠান এইচডিএফসি সিনপাওয়ার লিমিটেড আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার) পদ্ধতিতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে।

এই সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৮ হাজার মাউন্টিং পাইলস স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলোর ওপরে মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার সোলার প্যানেল আছে। এসব প্যানেল থেকে ৩৩২টি ইনভার্টারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
মির্জা আল মামুন, প্রকল্প ব্যবস্থাপক

করোনার প্রভাব থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাঁরা জানান, এখন পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে জাতীয় গ্রিডে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক মির্জা আল মামুন বলেন, এই সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৮ হাজার মাউন্টিং পাইলস স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলোর ওপরে মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার সোলার প্যানেল আছে। এসব প্যানেল থেকে ৩৩২টি ইনভার্টারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে এক কিলোমিটার তার টানা হয়েছে। বাকি চার কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ সঞ্চালন লাইন।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় গৌরীপুরের এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প
সংগৃহীত

দেশের সৌরবিদ্যুৎ বাস্তবায়নের পথে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম মেগা প্রকল্প উল্লেখ করে এইচডিএফসি সিনপাওয়ার লিমিটেডের পরিচালক শেখ শফিকুল ইসলাম জানান, পরিবেশবান্ধব এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে শিগগিরই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ শুরু হবে। প্রকল্পটির কারণে স্থানীয়ভাবে শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক ও ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (দক্ষিণ) নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ বলেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের অধীনে অফিস ভবন, নদীশাসন বাঁধ, সোলার প্লেট বসানো, ১০টি বক্স ট্রান্সমিশনে সংযোগ স্থাপন, সাবস্টেশনসহ ১৩২ কেভিএ ট্রান্সমিশন টাওয়ার নির্মাণ, জাতীয় গ্রিড লাইন পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন ইকুইপমেন্ট টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের পর সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার কথা চিন্তা করে নবায়নযোগ্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের মোট বিদ্যুৎ উন্নয়ন খাতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথা সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে, যা মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ।