উদ্বোধনের চার বছরেও শুরু হয়নি নতুন ভবনের কার্যক্রম

২০১৭ সালের ২০ জুলাই ভবনটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল বাড়েনি।

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের নতুন ভবন
ছবি: প্রথম আলো

উদ্বোধনের চার বছর পরও ২৫০ শয্যার হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। নতুন আটতলা ভবনে কোনো শয্যা স্থাপন করা হয়নি, কেনা হয়নি কোনো চিকিৎসা সরঞ্জাম। বর্তমানে পুরোনো ১০০ শয্যার হাসপাতাল ভবনেই চলছে সব চিকিৎসা কার্যক্রম।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ ১০০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে সরকার ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আটতলা একটি ভবন নির্মাণ করে। ২০১৭ সালের ২০ জুলাই ভবনটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। হাসপাতালটি কাগজে-কলমে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল বাড়েনি। বর্তমানে একজন তত্ত্বাবধায়ক, ২৫ জন চিকিৎসকসহ মোট ৫৮ জন কর্মরত আছেন, যা ৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনার উপযোগী জনবল।

গত শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, ভবনের নিচতলায় কোভিড-১৯–এর টিকা দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস

হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। চতুর্থ তলাটি অস্ত্রোপচারের জন্য রাখা হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলাটি করোনা রোগীদের আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে কয়েকটি শয্যা ফেলে রাখা হয়েছে। তবে কোনো রোগী নেই। বাকি তলাগুলো ফাঁকা। অথচ শয্যাসংকটের কারণে পুরোনো ভবনের ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা মহল্লার সিরাজুল ইসলাম (৬৫) বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করার পর তা এভাবে ফেলে রাখার মানে কী? জনবলই-বা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না কেন?
আবদুল আলিম সরদার, সদস্য, জেলা আইনজীবী সমিতি, হবিগঞ্জ

জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা তাঁকে কোনো পরীক্ষা বা চিকিৎসা না দিয়েই পাঠিয়ে দেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এভাবে কোনো দুর্ঘটনা বা গুরুতর রোগী এ হাসপাতালে এলেই সিলেট কিংবা ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে।

হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আবদুল আলিম সরদার বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করার পর তা এভাবে ফেলে রাখার মানে কী? জনবলই-বা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না কেন? বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। তারা জনগণের সমস্যা আমলেই নিচ্ছে না, এই গাফিলতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ হবিগঞ্জ হাসপাতালের পরিস্থিতি স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার চিত্র ফুটে উঠেছে বলে তিনি মনে করেন।

হাসপাতালের প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ না দেওয়ায় নতুন ভবনে কার্যক্রম চালু করতে পারছেন না জানিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হেলাল উদ্দিন বলেন, পুরোনো ১০০ শয্যার হাসপাতালের ৫৮ জন লোকবল দিয়েই চলছে তাঁদের কার্যক্রম। হাসপাতালটি দ্রুত চালুর জন্য তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। তিনি আশাবাদী শিগগিরই চালু করা সম্ভব হবে। হাসপাতালটির জনবল নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থাপনের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ডেপুটি সিভিল সার্জন মুখলেছুর রহমান।