উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সমাজকর্মীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন সমাজকর্মী আমিনুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে ১৫-২০ জন ইউনিয়ন সমাজকর্মী বেলা সাড়ে ১১টায় ক্ষেতলাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কার্যালয়ে আসেন। তখন সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সেখান থেকে দৌড়ে ইউএনওর কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ইউনিয়ন সমাজকর্মীদের উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে আটকে রাখে। পরে ইউএনওর মধ্যস্থতায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এফ এম আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, সমাজসেবা কার্যালয়ে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাইরে থেকে ইউনিয়ন সমাজকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করেছিলেন। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ঘটনাটি তদন্ত করছেন।

জয়পুরহাট সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইমাম হাসিম রোববার বিকেল পাঁচটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ক্ষেতলালে এসেছি। কী ঘটনা ঘটেছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই মুহূর্তে কার দোষ তা বলা যাচ্ছে না।’

সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ওঠেছে। আমি এসব অনিয়ম-দুর্নীতির কথা বলে দিয়েছি মনে করে তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন।
আমিনুল ইসলাম, ইউনিয়ন সমাজকর্মী

ইউনিয়ন সমাজকর্মী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে বিভিন্ন প্রকল্পের ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৬৯ টাকা কাছে রয়েছে। সমাজসেবা কর্মকর্তা গত মাসে লিখিত দিয়ে টাকা জমা দেওয়ার জন্য সময় নিয়েছিলাম। ওই ঘটনার পর সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ওঠে। আমি এসব অনিয়ম-দুর্নীতির কথা বলে দিয়েছি মনে করে তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। রোববার সকাল নয়টায় তিনি আমাকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে টাকা ফেরত চান। তখন তাঁকে বলেছি আপনাকে তো আগেই লিখিত দিয়েছি। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন।’

ইউনিয়ন সমাজকর্মী আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, লাঞ্ছিত করার বিষয়টি তিনি জেলা ইউনিয়ন সমাজকর্মী কল্যাণ সমিতিকে জানিয়েছেন। এরপর বেলা সাড়ে এগারোটায় ১৫-২০ জন সামাজকর্মী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আসেন। এ সময় সমাজসেবা কর্মকর্তা তাঁর কার্যালয় থেকে দৌড় গিয়ে ইউএনওর কক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। সমাজসেবা কর্মকর্তা তাঁকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি আড়াল করতে ইউনিয়ন সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

আমিনুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমিনুল ইসলাম বিভিন্ন প্রকল্পের ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৬৯ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।আজকে তাঁকে আমার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ওই টাকা ফেরত চেয়েছি। এতে তিনি আমাকে গালি দিয়েছেন।
মিজানুর রহমান, ক্ষেতলাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, জয়পুরহাট

ক্ষেতলাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সমাজকর্মী আমিনুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমিনুল ইসলাম বিভিন্ন প্রকল্পের ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৬৯ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আজকে তাঁকে আমার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ওই টাকা ফেরত চেয়েছি। এতে তিনি আমাকে গালি দিয়েছেন। এ ঘটনায় ইউনিয়ন সমাজকর্মী আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ইউনিয়ন সমাজকর্মী আমিনুল ইসলাম অন্য উপজেলার ইউনিয়ন সমাজকর্মীদের ডেকে নিয়ে আমার কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা আমাকে মারতে উদ্যত হন। আমি  দৌড়ে ইউএনও স্যারের কক্ষের সামনে গিয়ে অবস্থান করে নিজেকে রক্ষা করেছি।’  

ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নীরেন্দ্রনাথ ইউনিয়ন সমাজকর্মী আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।