মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন ৭ অক্টোবর। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট কারচুপি ও ভোটকেন্দ্র দখলের পাঁয়তারার অভিযোগ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন আফজল হক ও প্রেমসাগর হাজরা। আজ সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তাঁরা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেছেন।
আফজল হক ও প্রেমসাগর হাজরা—দুজনই আওয়ামী ঘরানার লোক। আফজল হক শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি এবং প্রেমসাগর হাজরা উপজেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আফজল হক। এ সময় প্রেমসাগর হাজরা পাশে বসে ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিভিন্নভাবে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন যেকোনো মূল্যে কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপি করে তিনি বিজয়ী হবেন। তিনি শ্রীমঙ্গল পৌরসভা ও শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের সব ভোটকেন্দ্র ভোটের আগের রাতে দখলের পরিকল্পনা করছেন।
যেহেতু শ্রীমঙ্গল উপজেলায় কোনো দুর্গম এলাকা নেই, এ জন্য তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরুর আধা ঘণ্টা আগে ব্যালট পেপার পৌঁছাতে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাঁর (নৌকার প্রার্থী) কর্মী–সমর্থকদের দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি ও প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে আসছেন। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, মিছিলের মাধ্যমে শহরজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এসব কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। শ্রীমঙ্গল পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের সব ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। প্রশাসন যেন এই কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। পাশাপাশি উপজেলার সব ভোটকেন্দ্রে বিজিবি মোতায়েন এবং শ্রীমঙ্গল পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের সব কেন্দ্রে আলাদাভাবে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এখানে চা-বাগানের একটি বড় অংশ রয়েছে। তাঁরা (চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠী) সব সময় জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করে আসছেন। তাঁদের ভোটাধিকারে যেন কোনো হস্তক্ষেপ না করা হয়। শ্রীমঙ্গল শান্তির শহর, শান্তির উপজেলা। তাঁরা এই উপজেলা নির্বাচনে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাইছেন। এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী যদি কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেন, ভোট কারচুপি করতে চান, তাহলে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। এ রকম পরিস্থিতি হলে নৌকার প্রার্থীই দায়ী থাকবেন। তাঁরা প্রশাসনের কাছে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও ভোটের ফলাফল সুষ্ঠুভাবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
যেকোনো নির্বাচনে আশঙ্কা থাকে। এখানে কারচুপি, দখলের কোনো সুযোগ নেই। পর্যাপ্ত ফোর্স, কড়া নজরদারি রাখছি।
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজল হক বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ‘আমরা তো এমনি পাস। ভোট দিলেও পাস, না দিলেও পাস। আমরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে বোঝাতে চাই, আমরা একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন করতে চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যে কাউকে আমরা মেনে নেব। এই উপজেলায় অনেক জাতিগোষ্ঠীর বাস। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে। সেটা সংরক্ষণ করতে চাই। কেউ যেন চা-শ্রমিকের ভোট প্রদানে হস্তক্ষেপ না করে।’
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রেমসাগর হাজরা বলেন, ‘এটা স্থানীয় নির্বাচন, জাতীয় না। নির্বাচন যাতে সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়, সেটাই আশা করছি। শ্রীমঙ্গল থেকে যেন একটি সুন্দর নির্বাচন শুরু হয়। চা-বাগানের মানুষ সরল-সহজ। তাঁদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা কাউকে বাধা দিইনি, দেবও না। প্রতিটি চা-বাগানে নৌকার অফিস আছে। আমরা মানুষের কাছে ভোট চাচ্ছি। আর তারা কারচুপির পরিকল্পনা করছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ভানু লাল রায় আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চা-বাগানে আমার প্রায় দুই লাখ পোস্টার লাগিয়েছি। একটাও নাই। চা-বাগানে আমার পক্ষে গ্রামের মানুষ ঢুকতে পারছে না। চা-বাগানের ১৮টি সেন্টারে প্রিসাইডিং অফিসার থাকতে পারবে কি না, বুঝতেছি না। কারচুপি দখল সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। এসব আমি বুঝি না। আমার জীবনে নির্বাচনে আমি হারিনি (তিনি শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান)। নৌকার বিজয় ঠেকানো যাবে না বলে তাঁদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
জেলা নির্বাচন অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব গত ২১ মে মারা গেলে পদটি শূন্য হয়েছে। নির্বাচনে প্রার্থী চারজন। আওয়ামী লীগের ভানু লাল রায় (নৌকা), জাতীয় পার্টির মিজানুর রব (লাঙ্গল) এবং স্বতন্ত্র আফজল হক (ঘোড়া) ও প্রেমসাগর হাজরা (আনারস)। উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯১৬ জন। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ১৫ হাজার ৭২১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ১৯৫ জন।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে প্রায় ৮০০ পুলিশ থাকবে। এ ছাড়া নিয়মিত দুই প্লাটুন বিজিবি থাকবে। নির্বাচন কমিশন আরও এক প্লাটুন বিজিবি চেয়েছে। এ ছাড়া আনসারও থাকবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করতে যা যা করার, আমরা তা করব।’
মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনে আশঙ্কা থাকে। এখানে কারচুপি, দখলের কোনো সুযোগ নেই। পর্যাপ্ত ফোর্স, কড়া নজরদারি রাখছি। এ নিয়ে আজকেও (সোমবার) এসপি মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি।’