উপরিভাগের মাটি ইটভাটায়, ফসলি জমির বারোটা

আমন ধানের খেত থেকে চলছে মাটি কাটা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চাপোড় গ্রামে
প্রথম আলো

আমন ধান কাটা শেষ হতে না হতেই ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। নগদ টাকা পাওয়ার আশায় অনেক কৃষক এ কাজ করছেন। এভাবে উপরিভাগের মাটি কাটায় জমির উর্বরতা কমে যায় বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদেরা।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ‘ফসলি জমির উপরিভাগের ১০–১৩ ইঞ্চির মধ্যে খাদ্যের গুণাগুণ ও জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির খাদ্য জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফসলি জমির মাটি কাটা বেআইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ফসলি জমির মাটি বেচাকেনার কাজে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আছেন। তাঁরা বছরের বিভিন্ন সময় কম দামে একর বা বিঘা চুক্তিতে কৃষকের জমির মাটি কিনে রাখেন। ভাটার মৌসুমে জমি থেকে মাটি কেটে তা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করেন। কোনো কোনো কৃষক সরাসরি ভাটার মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে মাটি বিক্রি করেন।

গুয়াগাঁও গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী সরিফুল ইসলাম বলেন, তিনি ১৩ বছর ধরে মাটির ব্যবসা করছেন। ভেমটিয়া, মসলন্দপুর, চাপোড়, মালঞ্চাসহ ৮টি গ্রামের ৯ বিঘা জমির উপরিভাগের মাটি কিনে রেখেছেন। দুই-তিন ফুট গভীরতায় মাটি কেটে ভাটার মালিকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমির মাটির জন্য ৪০-৪৫ হাজার টাকা হারে চুক্তি হয়েছে। এ জন্য টাকা বায়না দিয়ে রেখেছেন।

মসলন্দপুর গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী চৈতু রাম বলেন, ‘আমি ভাটার শ্রমিক ছিলাম। পাঁচ বছর ধরে মাটির ব্যবসা করছি। মাটি কাটার বিনিময়ে কৃষককে প্রতি বিঘায় ৪৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এ চুক্তিতে ছয়জনকে অগ্রিম টাকা দিয়ে জমিগুলো ধরে রেখেছি। এক সপ্তাহের মধ্যেই কাটা শুরু করে দেব।’

বুধ, বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার ঘুরে দেখা যায়, পাড়িয়া, ভেলাতৈড়, সিন্দুরনা, মল্লিকপুর, চাপোড়, নিয়ামতপুর, সিরাইল, বৈরচুনা, খনগাঁও, গড়গাঁও ও দৌলতপুর গ্রামে ফসলি জমির মাটি কাটা চলছে। ৩–৯ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি কাটা হচ্ছে। খননযন্ত্রের সাহায্যে এসব মাটি কেটে ট্রাক্টর ও ট্রলির সাহায্যে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহজাহান বলেন, চলতি মৌসুমে পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৭টি ভাটায় ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। তবে পুঁজি সংকটসহ নানা কারণে এ বছর চার-পাঁচটি ভাটা কমে যেতে পারে।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভাটার জন্য মাটি কিনতেই হয়। আমি কাটার সময় ফসলি জমির উপরিভাগের ছয়-সাত ইঞ্চির মাটি কেটে আলাদা করে রাখি। কাটা শেষ হলে ওই মাটি জমিতে ছিটিয়ে দিতে বলি। যেন উপরিভাগের মাটির জৈব উপাদানগুলো চলে না যায়।’

ভাটামালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আবু জহিদ বলেন, ‘মাটি ছাড়া তো আর ইট তৈরি করা যাবে না। তাই ভাটার মালিককে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি সংগ্রহ করতেই হয়। যে কৃষকের জমিতে ঠিকমতো ফসল হয় না, সে জমি আবাদযোগ্য করতে খাল করার প্রয়োজনেই অনেক কৃষক ভাটায় মাটি বিক্রি করেন। আমি মাটি কেটে নিয়ে আসি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘আবাদি জমির ছয়–আট ইঞ্চি পর্যন্ত লাঙল স্তর থাকে। এ স্তর থেকে ফসল তার খাদ্য গ্রহণ করে। উপরিভাগের মাটি কাটার কারণে জমির উৎপাদনশীলতা কমে যায়।’